খুলনা সিটিতে প্রার্থীদের ‘মর্যাদার লড়াই’

Looks like you've blocked notifications!

আওয়ামী লীগ বলছে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। আর বিএনপি বলছে, খুলনায় ধানের শীষ কখনো হারেনি। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আসলে কে বিজয়ী হবে, তা জানতে ১৫ মে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিনের চিত্র বলে দেবে, কে হবেন খুলনা সিটি করপোরেশনের পঞ্চম মেয়র।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক খুলনার উন্নয়নের জন্য তাঁর হারানো পদ পুনর্দখল করতে চাইছেন। আর বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দাবি করে তিনি তাঁর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।

৪৫ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের খুলনা সিটি করপোরেশনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তবে এবার মোট ভোটার হয়েছেন চার লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন, যার মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ আর নারী ভোটার দুই লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। নতুন ভোটার প্রায় ৫২ হাজার। গাজীপুর সিটির নির্বাচন বন্ধ হওয়ার পর দেশবাসীর দৃষ্টি এখন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে। এই নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে একটা আভাস পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সবাই। এরই মধ্যে জাতীয় নেতারা খুলনা সিটি করপোরেশন নিয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন।

পাঁচ মেয়র প্রার্থী : আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া মেয়র পদে লড়ছেন জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) এস এম শফিকুর রহমান, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার (কাস্তে) মিজানুর রহমান বাবু এবং ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) মো. মুজ্জাম্মিল হক। আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন করেছে ১৪ দলীয় জোট আর বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছে ২০ দলীয় জোট।

প্রচারণা : তালুকদার আবদুল খালেক যা ভালো বোঝেন, প্রকাশ করে ফেলেন। তাতে অনেকেই খুশি হতে পারেন না। তবে এবার তিনি প্রথম থেকে প্রচণ্ড সতর্ক অবস্থান নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। হুট করেই দলের নেতাকর্মীদের ওপর নাখোশ হয়ে বকাবকি করছেন না। বিগত নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর আচরণ নিয়ে ক্ষোভ ছিল। গণসংযোগকালে তিনি দ্রুত হেঁটে সামনে যাকে পাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। সকালে ৭/৮টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ভোটারদের বলছেন, তার পাঁচ বছর মেয়র থাকাকালে খুলনায় যে উন্নয়ন হয়েছে, পরবর্তী পাঁচ বছরে সে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি বিএনপি মেয়র মনিরুজ্জামান মনি। খুলনার উন্নয়নের স্বার্থে তাকে আবার ভোট দেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন।

বিএনপির দলীয় কোন্দল কাজে লাগাচ্ছেন আবদুল খালেকের সমর্থকরা। সর্বশেষ ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান প্যানেল মেয়র ২ ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শেখ হাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের  প্রচারণায় যোগ দেন। পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দল থেকে শেখ হাফিজুর রহমানকে বহিষ্কার করা হয়।

অন্যদিকে, বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু গণসংযোগে গিয়ে ভোটারদের জড়িয়ে ধরে বিশেষ সহানুভূতি নিচ্ছেন। তিনি প্রচারণায় বলছেন, নির্বাচিত হলে তিনি সিটি করপোরেশনকে জনতার ভবন বানাবেন। সকলের জন্য তাঁর দরজা থাকবে উন্মুক্ত। খুলনা মহানগরীর যে কেউ তাঁর কাছে যেতে পারেন, কেউ কিছু সমস্যা নিয়ে গেলে তিনি তাঁর ব্ক্তব্য শোনেন এবং সমাধান করার চেষ্টা করেন।

২০০৮ সালের সিটি করপোরেশন  নির্বাচনে  বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু মনিরুজ্জামান মনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার মোট ভোটার ছিল তিন লাখ ৯৯ হাজার ৩৯৮ জন। ভোট দেয় তিন লাখ ১০ হাজার ৭৯১। তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছিলেন এক লাখ ৫৭ হাজার ৮১২ ভোট আর মনিরুজ্জামান মনি পেয়েছিলেন  এক লাখ ৩১ হাজার ৯৭৬ ভোট।

২০১৩ সালে নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল চার লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন, ভোট দেয় তিন লাখ দুই হাজার ৫১৯ জন। সে সময় মনিরুজ্জামান মনি ভোট পান এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট, তালুকদার আবদুল খালেক পান এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট।

বিএনপি মেয়র প্রার্থী মঞ্জুর অভিযোগ, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত ১৫০ জনকে আটক করে বিভিন্ন মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে।

তবে পুলিশ কমিশনার হুমায়ন কবীর ৯ মে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে জানান, নিয়মিত মামলার আসামিদের আটক করা হচ্ছে। এজাহারে নাম না থাকলেও তাঁরা কীভাবে আসামি এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার  জানান, বাদী আগে তাদের শনাক্ত করতে পারেনি, এখন তাদের শনাক্ত করেছে। তাই আটক করা হচ্ছে। তিনি ২ মে গাড়ি ভাংচুর আর সড়ক অবরোধ করার কথা জানেন না বলে জানান।