কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, খাদ্য সংকট চরমে

ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি হ্রাস পাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় ঘরে ফিরতে পারেনি অনেক বানভাসি মানুষ। শ্রমজীবী মানুষের হাতে কাজ না থাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। একই সঙ্গে আছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।
এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার নয়ারহাট, মোহনগঞ্জ, চিলমারী উপজেলার রমনাঘাট ও বাসন্তি গ্রামে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত তিন দিনের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় শতাধিক ঘরবাড় ও ফসলি জমি। এ ছাড়া সদর উপজেলার কদমতলা, রাজারহাট উপজেলার, থেতরাই ইউনিয়নে ধরলা ও তিস্তার ভাঙনে ঘরবাড়ি ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘বন্যার পানি কমলেও এখনো ঘরবাড়ি থেকে পানি সরে না যাওয়ায় বাড়ি যেতে পারি নাই। এ সময় হাতে কোনো কাজকর্ম নাই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার কোনো খোঁজখবর নেন না। বউ-বাচ্চা নিয়া খুব কষ্টে আছি।’
জেলার নয় উপজেলার ৫৫ ইউনিয়নে ৫৩ হাজার হেক্টর জমির আমনক্ষেত দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশির ভাগ ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমনের ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পারলে আমন আবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের কৃষক রব্বানী বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে তাঁর আমনক্ষেত পানিতে তলিয়ে থাকায় সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো এক হাত পানির নিচে তলিয়ে আছে। আমনের চারাও নাই। শেষ সময়ে বন্যা হওয়ায় আর চারা রোপণ করা সম্ভব নয়। এবার না খেয়ে থাকতে হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জানান, জেলায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল। এরই মধ্যে অনেক ক্ষেতের পানি নেমে গেছে। আসলে কী পরিমাণ ক্ষেত সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়েছে- তা নিরুপণ করতে কাজ করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জানান, জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। নদ-নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যায় এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিক্ষেত্র। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণে কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের সবকয়টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।