সেই পাগলা মসজিদের দানবাক্স ভেঙে টাকা চু্রির চেষ্টা!

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্স ভাঙার সময় সিসি ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধরা পড়ে। ছবি : এনটিভি

কথায় বলে চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। তাই তো, কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকেও টাকা চুরির চেষ্টা করেছে এক চোর। গতকাল শনিবার রাত পৌনে ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

তবে বস্তাবন্দি ৮ লাখ চার হাজার ৯৮১ টাকা নিয়ে পালানোর আগেই টের পেয়ে যায় দুই নৈশপ্রহরী। আর তার চুরির দৃশ্য ধরা পড়ে মসজিদের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাতেও।

জানা যায়, গতকাল রাতে এক মুখোশধারী চোর পাগলা মসজিদের মালখানার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। পরে সেখানে রাখা দানবাক্সের দুটি তালা কেটে সিন্দুকের সব টাকা একটি বস্তায় ভরে। কিন্তু বস্তাভর্তি টাকা নিয়ে পালানোর সময় টের পেয়ে যান নৈশপ্রহরী শরীফ ও মকবুল। তাঁরা চোরকে ধাওয়া দেন। এ সময় চোর তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে শরীফের মাথায় আঘাত করে। অন্য নৈশপ্রহরী মকবুল ধাওয়া করতেই থাকেন। একপর্যায়ে টাকার বস্তা, লোহার রড ও গ্রিল কাটার যন্ত্রপাতি মসজিদের সামনে নরসুন্দা নদীর পাশে ফেলে পালাতে বাধ্য হয় চোর।

পরে আজ রোববার সকালে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সিনিয়র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদের তত্ত্বাবধানে ও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটির সদস্য ও কর্মচারীরা বস্তাবন্দি টাকা গণনা করেন।

আবু তাহের মোহাম্মদ সাঈদ জানান, সেখানে আট লাখ ৪ হাজার ৯৮১ টাকা পাওয়া যায়। পরে উদ্ধার করা টাকাগুলো রুপালী ব্যাংকে মসজিদের অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সের উদ্ধার হওয়া টাকা গণনা করা হচ্ছে। ছবি : এনটিভি

টাকা গণনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান হাসান জানান, ঘটনার ধারণ করা সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে চোরের নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে তিনি জানান।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)আবু শামা মো. ইকবাল হায়াত জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। মামলা হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ঐতিহ্যবাহী এই পাগলা মসজিদের চারটি দানসিন্দুক রয়েছে। এসব দানসিন্দুকে প্রতি দিন লাখ টাকার ওপর জমা হয়। সবশেষ, গত ৩১ মার্চ দানসিন্দুকগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৮৩ দিনে ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

এর আগে ৪ মাস ১১ দিন পর দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭১ টাকা। টাকা ছাড়াও দানবাক্সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণালংকার, ডলার, রিয়ালসহ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে আনুমানিক চার একর জায়গা জুড়ে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ অবস্থিত। প্রায় ২৫০ বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

দানবাক্সে পাওয়া টাকা দিয়ে মসজিদ ও কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত এতিমখানা, মাদ্রাসা, কবরস্থানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এছাড়াও এই টাকা দিয়ে জেলার অন্যান্য মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং দুঃস্থ মানুষকে সহায়তা করা হয় বলে জানান মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুর রহমান রুমেন।