হবিগঞ্জে লন্ডন প্রবাসীর মা ও স্ত্রী খুন

Looks like you've blocked notifications!
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে নিহত লন্ডন প্রবাসীর মা ও স্ত্রী। ছবি : এনটিভি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় লন্ডন প্রবাসীর মা ও স্ত্রীকে খুন করেছে দুবৃর্ত্তরা। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সাদুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী আখলাক চৌধুরীর মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম। এ খুনের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আজ দুপুরে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ ও পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

হত্যার ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন সাদুল্লাপুর গ্রামের কারি আবদুস সালাম (৬০), তাঁর ছেলে শাহিদুর রহমান (৩৫), একই গ্রামের যুবক শুভ রহমান (৩০) ও আবু তালেব (২০)।

পুলিশ বলছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাঁদের কাছে খুনের মোটিভ পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

এলাকাবাসী ও পুলিশের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তবে নিহতের স্বজনরা ধারণা করছেন, কোনো ডাকাতদল এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাদুল্লাপুর গ্রামের মৃত রাজা মিয়ার ছেলে আকলাক মিয়া দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। দুই বছর আগে একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছোট বোন রুমি বেগমকে বিয়ে করেন আকলাক। বিয়ের পর থেকে বাড়িতে শুধু মা মালা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম থাকতেন। দিনের বেলায়ও ঘরের কেচি গেটে তালা লাগানো থাকত। রোববার রাত ১২টার দিকে হঠাৎ গ্রামে চিৎকার শুরু হলে লোকজন ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে দেখতে পান লন্ডন প্রবাসী আকলাক মিয়ার বাড়িতে রক্তাক্ত লাশ পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের বাইরে থেকে গৃহবধূ রুমি বেগম ও ঘরের ভেতরে তাঁর শাশুড়ি মালা বেগমের ক্ষতবিক্ষত লাশ  উদ্ধার করে। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ  থানা পুলিশ হাসপাতাল গিয়ে লাশ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে।

নিহত রুমি বেগমের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিদিনই তিনি তাঁর বোনের বাড়ির লোকজনের খোঁজ-খবর রাখতেন। গতকাল রাতে বোন রুমি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানায়, চোখে আঘাত পেয়েছে, ওষুধ দিতে বলেন। পরে বোনের পাশের বাড়ির তালেব মিয়া রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওষুধ নিতে আসে। তিনি ওষুধ দিয়ে পাঠানোর দেড় ঘণ্টার মাথায় নির্মম এ ঘটনার খবর পান।

এদিকে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা কয়েকজন স্থানীয় লোকজন জানায়, চিৎকার শুনে তারা বাড়িতে গিয়ে লাশ দুটি দেখতে পায়। এ সময় ঘরের একটি টেবিলে চারটি চায়ের কাপ ছিল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা ঘটনার আগেই বাড়িতে অবস্থান করছিল। তবে ঘরের কোনো মালামাল খোয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

এদিকে ডাকাতি  করতে গিয়ে না কি অন্য কোনো কারণে পরিকল্পিতভাবে বউ-শাশুড়িকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ধারণা করা যাচ্ছে, হত্যাকারীরা পূর্ব পরিচিত। পুলিশ ঘরের ভেতর থেকে একটি জুতা ও একটি হাতঘরি  উদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে। গ্রামবাসী নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছে।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আতাউর রহমান বলেন, খুনের ঘটনাটি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এখনো কোনো মোটিভ উদ্ধার হয়নি। বউ-শাশুড়ির খুনের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে।

ওসি আরো বলেন, আমরা খবর পেয়ে রাতেই লাশ দুটি উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। এ খুনের ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। খুনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা পেলে এজাহারভুক্ত করা হবে।