কর্মিসভার বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ আরো দুই শতাধিক

Looks like you've blocked notifications!

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভীন তালুকদার মায়ার কর্মিসভায় বিতরণ করা বিরিয়ানি খেয়ে আবার দুই শতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে গত দুদিনে পৃথক দুই কর্মিসভায় অসুস্থ হয়ে পড়া লোকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ শতাধিক।

গত বুধবার ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগদলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভীন তালুকদার মায়া উপজেলা শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডের কাঁচাবাজার এলাকায় একটি কর্মী সমাবেশ করেন। এই কর্মিসভাতেই এ ঘটনা ঘটে।

গতকাল দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৩৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানালেন কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সাহাবুদ্দিন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এর আগের দিন মঙ্গলবার মহেশপুর হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিতরণ করা বিরিয়ানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শতাধিক মানুষ। তখন হাসপাতালে ভর্তি হন অন্তত ৭০ জন। তাদের অনেকে এখনো বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এদিকে, ঘটনার তদন্ত করতে ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাসকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন উপজেলার পাচিলা গ্রামের ছাত্র রাকিবুজ্জামান ও সেরখালী গ্রামের জামাল হোসেন বলেন, ‘কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির লতার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা শেষে দুপুরের দিকে উপস্থিতদের মধ্যে বিরিয়ানির প্যাকেট বিতরণ করা হয়। অধিকাংশ ব্যক্তি সেই খাবার বাড়িতে নিয়ে যান। এরপর সেই খাবার খেয়ে রাত ৯টার থেকে ডায়রিয়া, বমি ও পেটে ব্যথা নিয়ে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে থাকেন তাঁরা।’ হাসপাতালে ভর্তি অন্য ব্যক্তিরাও একই কথা জানান।

উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের কল্পনা জানান, বিরিয়ানির ভেতরে থাকা ডিমের একটি টুকরা তাঁর দেড় বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়াকে খেতে দিয়েছিলেন তিনি। এরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়েটি।

কোটচাঁদপুর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। যে যেখানে পেরেছেন, সেখানেই পড়ে আছেন। এদিকে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিএনসিসি ও স্কাউট দলের সদস্যরা হাসপাতালে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারি দলের এমপির লোকজন অসুস্থদের মধ্যে চিড়া, কলা ও স্যালাইন বিতরণ করে যাচ্ছেন।

হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ। তিনি পরপর দুদিন এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহাজান আলী বলেন, ‘গত বুধবার ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগদলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভীন তালুকদার মায়া উপজেলা শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ডের কাঁচাবাজার এলাকায় একটি কর্মী সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশে পরিবেশন করা খাবার খেয়ে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সরকারি দলের পক্ষ থেকে এ সমাবেশ ডাকা হয়নি। মায়া আওয়ামী লীগের কেউ নন। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করেছেন। পরে মায়া বরিশাল থেকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য এমপি মনোনীত হন।’

১৬/১৭ বছর পর আবারও পারভীন তালুকদার মায়া মহেশপুর কোটচাঁদপুরে এসে এলাকার পরিবেশ অশান্ত করে তুলেছেন বলেও দাবি করেন সাহাজান আলী।

এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কোটচাঁদপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কালো পতাকা উঁচিয়ে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জাহিদুল ইসলাম জিরে, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারজেল হোসেন প্রমুখ।

বর্তমান সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সফিকুল আজম খান চঞ্চল কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের কাছে তাঁরা এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। এ ছাড়া হাসপাতাল পরিদর্শনে করেছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এমদাদুল হকসহ পুলিশের একটি প্রতিনিধিদল।

তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ঝিনাইদহ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস।

জেলা প্রশাসক সরোজ দেবনাথ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, বিরিয়ানি রান্নার সঙ্গে জড়িত বাবুর্চির সন্ধানে নেমেছেন কয়েকজন চিকিৎসক।’

জানা যায়, মহেশপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জিন্নানগর থেকে রানা করা খাবার ট্রাকে করে আনা হয়। এরপর তা সভায় ওয়ার্ডভিত্তিক বিতরণ করা হয়। জিন্নানগরে মায়ার একটি পোশাক তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পারভীন তালুকদার মায়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে এর আগে তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এক ধরনের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।