বসুন্ধরায় আইফোন জব্দ, শুল্ক দেওয়া নিয়ে ধুম্রজাল

Looks like you've blocked notifications!
শুল্ক গোয়েন্দারা গতকাল শনিবার রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে অভিযান চালান। ছবি : স্টার মেইল

রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা আইফোন উদ্ধারের পরে সেগুলোর শুল্ক দেওয়া নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসব মোবাইলের শুল্ক দিতে চাইলেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।

আজ রোববার বসুন্ধরা সিটির ফোন একচেঞ্জের মালিক সরওয়ার হালদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল শনিবার আমার দোকান থেকে প্রায় ২০টি আইফোন জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। ওই সব  মোবাইল বেশির ভাগ ব্যবহৃত। আমি এসব মোবাইল বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছি।’

সরওয়ার হালদার বলেন, ‘এ নিয়ে তিনবার বসুন্ধরা সিটিতে অভিযান হয়েছে। এর মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার দোকান থেকে তিনবার প্রায় তিন কোটি টাকার মোবাইল ফোন নিয়ে গেনছে শুল্ক গোয়েন্দা ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও এখন পর্যন্ত তা ফেরত পাইনি।’ ভবিষ্যতে আর দোকানে ব্যবসা করা যাবে না বলে জানান তিনি।

রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে গতকাল শনিবার অভিযানে শুল্ক গোয়েন্দাদের বহন করা গাড়িটি আটকে রাখেন ব্যবসায়ীরা। ছবি : স্টার মেইল

সরওয়ার হালদারের অভিযোগ, ‘আজ শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে জব্দকৃত মোবাইলের কাগজগুলো দিয়ে এসেছি। তাঁরা বলেছেন, যাচাই-বাছাই করে ফেরত দেওয়ার মতো হলে দেবে। তবে আমরা ব্যবসায়ীরা এসব মোবাইল ফোনের শুল্ক দিতে চাইলে তাঁরা বলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) যোগাযোগ করতে। আবার বিটিআরসিতে যোগাযোগ করলে তারা বলে শুল্ক কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। এ নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা ধূম্রজালের মধ্যে আছি।’

গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার নামের এক দোকানের বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেসব দোকানে মোবাইল রাখার অনুমতি নেই, গতকাল শনিবার তাদের মোবাইল নিয়ে গেছে। আমাদের এখানে সরকার ও বিটিআরসির অনুমোদন রয়েছে।’

ওই বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘বেশির ভাগ দোকানে পুরোনো ব্যবহার করা মোবাইল শুল্ক কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে।’ তবে যাদের সঠিক কাগজ আছে তাদের মোবাইল নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে মোহাম্মদ রুবেল নামের এক দোকানি বলেন, ‘যখন একজন ব্যক্তি বিদেশে বেড়াতে যান বা বিদেশ থেকে দেশে আসেন তখন হাতে করে দুই একটি মোবাইল নিয়ে আসেন। সেসব মোবাইল তাঁরা আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আমরা সেগুলো কিনে হয়রানির শিকার হচ্ছি।’

রুবেল বলেন, ‘বিমানবন্দর দিয়ে যখন মোবাইল দেশে প্রবেশ করে তখন সে মোবাইলগুলোতে সরকার কোনো ট্যাক্স নেয় না। তাহলে আমাদের কাছ থেকে কেন নেওয়া হয়? এ ছাড়া এখন ট্যাক্স দিতে চাইলেও আমরা কোথায় দেব? শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এমন ধরনের কোনো উত্তর আমাদের দিতে পারেনি।’

রুবেল আরো বলেন, ‘এভাবে মোবাইল নিয়ে গেলে শুল্ক কর্তৃপক্ষ তা ফেলে রাখে। ফলে মোবাইলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আর আমরা সেসব মোবাইলে ট্যাক্স দিতে চাইলেও তা দিতে পারছি না। এভাবে সরকার শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আর আমরাও আমাদের ব্যবসার ক্ষতিতে পড়ছি।’

মিনহাজ নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি আমার ব্যবহার করা আইফোন ৮ বিক্রি করে আইফোন ১০ কিনব। আমার বড় খালা আমেরিকা থাকাতে সেখান থেকে মোবাইল ফোনটি পাঠিয়েছেন। তবে সে মোবাইলে কোনো ধরনের শুল্ক বা ট্যাক্স দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তাঁরা যেহেতু তাঁদের মোবাইল বৈধ করতে চাচ্ছেন, তাই শুল্ক কোথায় দেবেন তা নিয়ে সন্দিহান। তাঁদের সঠিক আইনটিও তারা দেখাচ্ছে না। আর এতে কোনো সমাধান হচ্ছে না।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘প্রথমত কেউ যদি মোবাইল বিক্রি করে বা দোকানে দেয় সে ক্ষেত্রে বিটিআরসির অনুমোদন লাগবে। আর সে অনুমোদন পাওয়ার পর মোবাইল ফোনের শুল্ক কাস্টমস হাউজে দিবেন তাহলে মোবাইল ফোনগুলো বৈধ বলে ধরা হবে।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা যে পুরাতন মোবাইল বেচাকেনা করছেন তা অবৈধ। আইনের দৃষ্টিতে তা বেআইনি। এ ছাড়া গতকালের আচরণের জন্য বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়েছে।’

গতকাল শনিবার বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে অবৈধভাবে আমদানি করা আইফোন উদ্ধার করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা এক শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন এবং তাঁদের একটি গাড়িও কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখেন।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক গাজী মো. জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল বেলা ১১টা থেকে বসন্ধুরা সিটি শপিং মলে অভিযান চালায়। অভিযানে শপিং মলের বিভিন্ন দোকান থেকে ১০০টি আইফোন জব্দ করা হয়। এসব আইফোন অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি।

এর পরই অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাতে থাকে বসুন্ধরা সিটির ব্যবসায়ীরা। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে মোবাইলগুলো সঠিক মালিকানা যাচাই-বাছাই শেষে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানালে ব্যবসায়ীরা অবরোধ তুলে নেয়।