‘পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধে প্রয়োজন চুক্তি বাস্তবায়ন’

Looks like you've blocked notifications!
রাঙ্গামাটিতে রোববার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও দলটির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার। ছবি : এনটিভি

পাহাড়ে যে হানাহানি রক্তপাত, সে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, দীর্ঘ সময় হয়ে গেছে কিন্তু চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের গড়িমসি টালবাহানা আজ বিদ্যমান। পাহাড়ের পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে জুম্মদের গলাটিপে ধরে রাখা হয়েছে। নতুন এই যে পরিস্থিতি কারা সৃষ্টি করেছে, কেন সৃষ্টি হয়েছে এবং এর সমাধান কী হতে পারে তা আমাদের ভাবতে হবে।

রোববার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২০তম কাউন্সিলের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাঙামাটি শহরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই সম্মেলন শুরু হয়।

এ সময় বক্তারা আরো বলেন, জুম্ম জাতিগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। তারা পরিষ্কারভাবে বোঝেন জুম্মদের অধিকার, মানবাধিকার দিতে হবে। বাঙালিরা যেমন ইংরেজ, আমেরিকানদের পরিচয়ে বাঁচতে পারে না, তেমনি জুম্মরাও বাঙালি হিসেবে বাঁচতে পারে না। এ স্বাধীন বাংলাদেশে সব মানুষের নিজের অধিকার নিয়ে বাঁচার অধিকার আছে। আজ পাহাড়ে ও সমতলের আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তারা এটি বন্ধ করার দাবি জানান। কারণ ভূমিপুত্র যদি নিজের ভিটায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, তখন মুক্তিযুদ্ধ বৃথাই হয়ে যায়।

এই অনুষ্ঠানে সভাপতি করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি জুয়েল চাকমা।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, ‘আজ স্বাধীন দেশে আমরা আতংকে বসবাস করছি। প্রতিনিয়ত জুম্মদের মনে আতঙ্ক কাজ করছে। পাহাড়ের আদিবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা, সহানুভূতি আছে। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসলে শস্যের ভেতরে ভূত, সরকারের ভেতরে সরকার। এ জন্যই এতো সমস্যা। হানাহানিতে সময় নষ্ট করলে চুক্তি বাস্তবায়ন হবে না। তা না হলে পাহাড়ের মানুষ মানুষের মতো বেঁচে থাকার বাস্তবতা থাকবে না।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘আজকে আমরা দেখছি রাস্তা ব্লক করে নাগরিক সমাজের সমাবেশ করা হয়। পার্বত্যাঞ্চলে আজ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। বেশ কিছুদিন ধরে এখানে শান্ত ছিল, আবার হঠাৎ করে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পাহাড়ে আজ এক প্রকার খেলা হচ্ছে, আর সেই খেলাতে আমরা মরে যাচ্ছি। এই হলো পাহাড়ের বাস্তবতা।’

সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার আরো বলেন, ‘গত ৩ মে নানিয়ারচরে যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, এর পক্ষে আমরা নই এবং এর পরদিনই ১৮ মাইল এলাকার যে ঘটনা আমি তারও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা বরাবরই বলে আসছি সন্ত্রাস আমরা চাই না, অস্ত্রবাজি আমরা চাই না। সরকারের যথাযথ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা অস্ত্রবাজদের, চাঁদাবাজদের, সন্ত্রাসীদের ধরবেন সেটা ঠিক আছে। একটা বিষয় আমি না বলে পারছি না। আমার দেশ গণতান্ত্রিক দেশ, এ সরকার গণতান্ত্রিক সরকার, এই পার্বত্যাঞ্চল গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হতে হবে।’

ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘আমরাও বারবার বলে এসেছি, অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে, এর বিরোধী আমরা নই। কিন্তু একটা গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের প্রতিনিধিদের অজান্তে যৌথ অভিযান হবে নাকি অন্য কোন অভিযান হবে, এটা আমাদের জানতে হবে। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও আমাকে কিছু জানানো হয় নাই। পত্রপত্রিকায় দেখেছি কিন্তু আমার সাথে কোনো আলাপ হয় নাই। উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানকেও জানানো হয় নাই, থোরচুঙ্গো করে রাখা হয়েছে। শুধু বেতন ভাতা দিয়ে আমাদের রাখার মানে কি? পার্বত্যাঞ্চলে কোনো ঘটনা ঘটে আমি জানি না, প্রধানমন্ত্রী জানে কি আমি জানি না।’

এ সময় ঊষাতন তালুকদার তাঁর বক্তব্যে রাঙামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সংরক্ষিত আসনে মনোনীত নারি সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর কঠোর সমালোচনা করেন।

এর আগে সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহি, সাংবাদিক নজরুল কবীর, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেল, জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুনির্মল দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ অরুন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি মনিরা ত্রিপুরা। এতে স্বাগক বক্তব্য দেন পিসিপির সহসাধারণ সম্পাদক রামভাই পাংখোয়া।