‘আগে নিজের ঘরের মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করুন’

Looks like you've blocked notifications!
খেলাফত মজলিশের ইফতারে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মাদকবিরোধী অভিযান হচ্ছে ভালো কথা। সবার আগে নিজের ঘরের মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করুন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’

আজ সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনের ‘পুষ্পদাম রেস্টুরেন্টে’ ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিশ।

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে নতুন করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অভিযান শুরু হয়েছে। ভালো কথা। আমরা অবশ্যই চাই যে, দেশ মাদকমুক্ত হোক, আমরা অবশ্যই চাই যে, যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক, এই মাদক নির্মূল করা হোক। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা হবে।’

ক্ষমতাসীন দলের মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনাদের কক্সবাজারের টেকনাফের এমপি (আবদুর রহমান বদি) তাঁকে তো জামিন দিয়ে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মহানন্দে এই ব্যবসা শুরু করেছেন। একজন দুজন নয় অসংখ্য প্রায় প্রত্যেকটি জায়গায় তাঁদেরকেই আজকে আপনারা (সরকার) ছেড়ে দিয়েছেন, যাঁরা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

সম্প্রতি ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে ছয়টি জেলায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই ক্রসফায়ারের নামে বিচারবর্হিভূত হত্যার নামে বহু বিরোধী পক্ষকে হত্যা করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে গুম করা হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, চৌধুরী আলমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাঁচ-ছয় বছর পার হয়ে গেছে- এ রকম অসংখ্যক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচারের নামে যা খুশি তাই করছেন। দেখুন কত সংকীর্ণ এরা (সরকার)। মামলাগুলো মিথ্যা। ৩৬টি মামলা করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে তাতে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিলো বাসে আগুন দিয়েছেন, গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন ইত্যাদি। এই মামলাগুলো যখন হাইকোর্টে জামিনের জন্য এসেছে সেখানে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বাধা প্রদান করেছেন।’

দেশের অর্থনীতি ও আর্থিকখাতে দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট, শিক্ষা ব্যবস্থার অনিয়ম তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে যদি আমরা এই দানবীয় শক্তিকে সরাতে না পারি তাহলে আমার দেশের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে।’

ইফতার মাহফিলের শুরুতে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের ও নায়েবের আমির মাওলানা শফিক উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য দেন।

ইফতারে খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ইফতারে জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারওয়ার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, লেবার পার্টির দুই অংশের মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এমদাদুল হক চৌধুরী, শামসুদ্দিন পারভেজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম চৌধুরী, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শেখ মুজিবর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা জাফরুল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারওয়ার, সাংবাদিক মহিউদ্দিন আলমগীর, মোস্তফা কামাল মজুমদার, আবদুল হাই শিকদার, অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা বাদল, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক মোজাহিদুল ইসলাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সহসভাপতি বাসির জামাল ইফতারে অংশ নেন।

ইফতারের আগে কারাবন্দি জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং খেলাফত মজলিশের অসুস্থ আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।