চোরাই গরু উদ্ধার করে বিপাকে পুলিশ

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা প্রাঙ্গণে উদ্ধার হওয়া তিনটি গরু। ছবি : এনটিভি

দুই চোরসহ তিনটি গরু আটক করে বিপাকে পড়েছে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। দুই চোরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হলেও গরু তিনটিকে পকেটের টাকা খরচ করে খাবার দিতে হচ্ছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে।

২৫ দিন ধরে গরু তিনটি বাঁধা রয়েছে থানার ফটক সংলগ্ন কম্পাউন্ডে। থানার কাজে আসা মানুষদের হাম্বা হাম্বা ডাকে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে গরু তিনটি।

বোয়ালিয়া থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল সকালে একটি ট্রাকে করে চোরেরা গরুগুলো নিয়ে যাচ্ছিল। নগরীর গোরহাঙ্গা এলাকায় পুলিশ ট্রাকটি থামিয়ে গরুর কাগজপত্র দেখতে চায়। তখন ট্রাক থেকে নেমে তিন-চারজন দৌড় দেয়। তাদের পালাতে দেখে পুলিশ দুজনকে ধরে ফেলে। এ সময় কৌশলে গরু রেখে ট্রাক নিয়ে চালকও পালিয়ে যায়।

এরপর আটক দুজন গরুগুলোর কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। গরুর মালিক কে, সে ব্যাপারেও মুখ খোলেনি তারা। ফলে উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা তাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন। এরপর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে মালিক না পাওয়ায় গরুগুলো ওই দিন থেকে থানাতেই রয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বোয়ালিয়া মডেল থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার প্রবেশ পথের গেট পেরুতেই সামনে খোলা আকাশের নিচে একটি গাভী, একটি ষাড় ও একটি বাছুরকে বেঁধে রাখা হয়েছে। একটি পাত্রে গরুগুলোর সামনে পানি দিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু কোনো খড় নেই। খাবারের জন্য একটু পর পরই গরুগুলো ‘হাম্বা হাম্বা’ শব্দে ডেকে যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারোরই।

থানার একজন পুলিশ সদস্য জানান, ২৫ দিন ধরে দিনরাত-সব সময় গরুগুলো এখানেই থাকে। এখন মাঝে মধ্যেই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। তখনো গরুগুলো সেখানেই থাকে। ঝড়ের সময় গরুগুলো ছোটাছুটি করে। ঠিকমতো খাবার না পেয়ে দিনে দিনে গরুগুলো হাড্ডিসার হয়ে যাচ্ছে। গরুগুলো থানায়ই ‘হাজতবাস’ করছে বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশ সদস্য।

এ নিয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগরীর উপশহর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গরুগুলোকে খাওয়াতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন আমিই গরুর মালিক হয়ে গেছি। প্রতিদিন থানায় গিয়ে আমি নিজে গরুর খাবার কিনে দিয়ে আসি। যতটুকু পারি, খাইয়ে যাচ্ছি। অবলা প্রাণীকে তো আর কষ্ট দেওয়া যায় না।’ গরুগুলোর খাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

এসআই মাহফুজুল ইসলাম জানান, মালিক না পাওয়ায় গরুগুলো থানায় রাখা হয়েছে। এখন সেগুলো কী করা হবে, সে সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। কিন্তু এ ব্যাপারে আদালত এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আদালতের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত গরুগুলোকে থানাতেই রাখতে হবে।