‘মা-বাবা থাকলে এভাবে চেয়ে খাতাম না’

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে ইফতার করছে পথশিশুরা। ছবি : এনটিভি

‘আমার মা-বাবা নেই। রায়ের বাজার বস্তিতে থাকি খালার সাথে। ধানমণ্ডি লেকে প্রতিদিন লোকের কাছ থেকে নিয়ে ইফতার খাই! মা-বাবা থাকলে এভাবে চেয়ে খাতাম (খেতাম) না। তবে আজ খুব ভালো লাগছে সবাই এক সাথে ইফতার করে।’

এভাবেই নিজের ছোট্ট মনের অনুভূতির কথাগুলো বলছিল আট বছর বয়সী পথশিশু হাবিব হোসেন।

সম্প্রতি রাজধানীর ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় হাবিবের। রমজান মাসের এই সময়টাতে যখন প্রতিটি ঘরে বসে খাবারের পসরা। যখন বাহারি খাবার নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করে আজানের, তখন মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় হাবিব।

চেয়ে আনা ইফতার ব্যাগে ভরতে ভরতে হাবিব জানায় নিজের কথা। 

শিশুটি জানায়, খুলনা থেকে এক বছর আগে ঢাকায় এসেছে সে। বাবা মারা গেছেন চার বছর আগে। আর মা ভারতের মুম্বাই শহরে গিয়ে আর ফেরেননি।

হাবিব জানে, তার মাকে কে বা কারা ভারতের যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দিয়েছে। মায়ের সঙ্গে তার তিন বছর যাবত কথা হয় না।

হাবিব বলে, ‘চাইলে ইফতারের সময় অনেকেই ইফতার খেতে দেয়। অনেকে দিতে চায় না। অনেকে আবার টাকা দেয়। ইফতার নিয়ে বস্তিতে চলে যাই। আমি আর আমার খালা এক সাথে খাই। তবে আজ সুমি আপা আমাদেরকে ইফতার করাইছে তাই সবাই এক সাথে ইফতার করেছি। খুব ভালো লাগছে।

হাবিবের সেই সুমি আপার সঙ্গেও কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। ফাহিমা সুমি বলেন, ‘প্রতিবারই এদের সাথে এখানে ইফতার করা হয়। খুব ভালো লাগে। সবাই এক সাথে বসে ইফতার করি। এসব শিশুরাও খুশি হয়। আনন্দ করে খায়। আমিও এদের সাথে বসেই খাই। এটাই রমজানের মজা।’

শুধু হাবিব না, এমন হাজারো শিশু রাজধানীতে ঘুরে বেড়ায়। কথা হয় এমন আরো কিছু শিশুর সঙ্গে।

রাব্বি হোসেন (৭) নামে এক শিশু বলল, ‘এহানেই ইফতার-টিফতার করি। বাবার রোগ আর মা ভিক্ষা করে। আমিও টাকা চাই লোকের কাছে। সগ্গুলি (সবাই) দুই-পাঁচ টাকা করে যা দেয় তা মার কাছে দেই। সব দিন সমান হয় না। আজগে ১০০, কালগে ৫০ টাকা। আবার ইফতারিও নিয়ে যাই মার জন্য। রাতে সেই ইফতার আমি আর আমার মা খাই।’

ইফাদ নামের এক শিশুর সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের। শিশুটি বলে, ‘মা আছে, ছোট বোন আছে কিন্তু বাবা বেঁচে নেই। এই ইফতার মায়ের কাছে নিয়ে যাব। মা, বোন আর আমি রাতে খাব।’

ধানমণ্ডি লেকের ভেতরে ইফতার করছিলেন সাজু ইসলাম। তাঁর কাছে গিয়ে দুজন পথশিশু ইফতার চাইলে তিনি তাঁর ইফতারের প্রায় অর্ধেক দিয়ে দেন তাদের। সে সময় তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এরা সবাই গরিব শিশু। এদের বেড়ে ওঠা এই রাস্তায় রাস্তায়। প্রতিদিন লেকেই ইফতার করি, এরাও আসে। প্রায় দিন এদের ইফতার দেই। দিতে ভালোই লাগে।’

ইফতারের সময় ধানমণ্ডি লেকের ভেতরে এবং বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে ঘুরে দেখা যায়, বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিচিতজনেরা যখন এক সঙ্গে ইফতার করছেন তখন এসব ছিন্নমূল শিশুরা তাদের কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ইফতার চাচ্ছে। কেউ দিচ্ছেন তো কেউ দিচ্ছেন না। কেউ আবার পাশে বসে খেতে বলছেন। তবে এরা খেতে চায় না। পরিবারের জন্য নিয়ে যেতে চায়। ঘুরে দেখা যায়, চেয়ে নেওয়া ইফতারগুলো এসব শিশুরা ব্যাগে ভরে রাখছে, পরে খাবে অথবা বাসায় নিয়ে যাবে বলে।