১০০ ছাড়াল নিহতের সংখ্যা

রাতে গুলিতে ১০ ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত

Looks like you've blocked notifications!

ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা ও ঠাকুরগাঁওয়ে গুলিতে সন্দেহভাজন ১০ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজেদের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তাঁদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ১৫ দিনে ১০৬ জন নিহত হলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা : রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আশিয়ান সিটি মাঠ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম সুমন মিয়া ওরফে খুকু সুমন (৩২)। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

দক্ষিণখান থানার সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মিজানুর  রহমান বলেন, পুলিশের কাছে সংবাদ আসে কিছু মাদক ব্যবসায়ী আশিয়ান সিটির মাঠে অবস্থান করছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এতে মাদক ব্যবসায়ী সুমন গুলিবিদ্ধ হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে এক হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, দুটি গুলি ও চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

দক্ষিণখান পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সুমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত পৌনে ২টায় মৃত ঘোষণা করেন বলে জানায় পুলিশ।

সাইফুল ইসলাম, যশোর : গতকাল রাতে যশোরে গুলিবিদ্ধ দুটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ দাবি করেছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা জানান, শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হন ওই এলাকার মানিক (২৭) ও সদর উপজেলার মণ্ডলগাতি গ্রামের আহসান আলী (৫৬)। নিহত দুজনই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, মানিকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় নয়টি ও আহসান আলীর বিরুদ্ধে ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি দেশি পিস্তল, দুটি গুলি ও পাঁচটি গুলির খোসা এবং ৬০০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, এর আগে সদর উপজেলার নোঙ্গরপুর এলাকা থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আজমল হুদা জানান, একদল ডাকাত গাছ কেটে সড়ক ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় ডাকাতদের একজনকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি জানান, গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির নাম বুলি (৫৬)। তার বাড়ি সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামে। তার বিরুদ্ধে ১৪টি ডাকাতির মামলা রয়েছে বলেও ওসি জানান।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার শফিউল্লাহ সবুজ বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, রায়পাড়ায় নিহত দুই ব্যক্তির মাথার খুলি গুলিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।

সাবিনা ইয়াসমিন শ্যামলী, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মোকাদ্দেশ হোসেন (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮)।  পুলিশের দাবি, এ ঘটনায় তাদের তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।

গতকাল দিবাগত রাত ৩টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেয়ালা বটতলা মাঠে এ ‘বন্দুকযুদ্ধে’র  ঘটনা ঘটে।

দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজগর আলী জানান, মাদকদ্রব্য কেনাবেচার জন্য একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার শেয়ালা বটতলা মাঠে অবস্থান করছিল। এ সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ গুলিবিদ্ধ দুজনকে উদ্ধার করে দৌলতপুর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, মোকাদ্দেশ হোসেন ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের আটটি করে মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফিরোজ আলম, আবদুর রাজ্জাক ও কনস্টেবল সুজিত কুমার আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, পাঁচটি গুলি, একটি পিস্তলের ম্যাগাজিন ও ২৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

কুমিল্লা, মো. জালাল উদ্দিন : মুরাদনগরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ‘মাদক ব্যবসায়ী’ নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন বাতেন ও রিটন ওরফে লিটন। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুরাদনগরের গুঞ্জর বেড়িবাঁধের পাশে একটি ইট ভাটার সামনে থেকে দুজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ও মুরাদনগর থানার ওসি মঞ্জুর আলমের নেতৃত্বে বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ওত পেতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে  লিটন ও বাতেন আহত হয়। পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তারা মারা যায়। তাদের সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানা পুলিশের এসআই মোজাম্মেল, এসআই মাসুদুর রহমান ও এসআই রোকন আহত হন।

পুলিশ জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পাইপগান ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, নিহত মাদক ব্যবসায়ী বাতেনের বিরুদ্ধে মুরাদনগর থানায় আটটি ও লিটনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। এ নিয়ে সাত দিনে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলো।

আইয়ুব আলী, ময়মনসিংহ :  পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মিজান (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ডাকাত বলে পুলিশের দাবি। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ২টায় ভালুকার পাড়াগাও চটনপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ভালুকা থানার ওসি (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ ও এএসআই শাহ আলম গুরুতর আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গ্রাম হেরোইন, তিনটি গুলির খোসা, একটি রামদা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান রাতে এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওসি জানান, মাদক ভাগাভাগির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ গুলি করে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে এলাকা তল্লাশির সময় মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি মো. মিজানকে (৪৫) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত মিজানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ আট/নয়টি মামলা আছে বলেও জানায় পুলিশ।

সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা : কলারোয়ায় আনিসুর রহমান (৪০) নামের এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, গতকাল রাত সোয়া ২টায় তাঁর কাছে খবর আসে যে দেয়াড়া ইউনিয়নের পিপলাপোলের মাঠে মাদক চোরাচালানিদের দুটি পক্ষ মাদক ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করছে। এ খবর পেয়ে খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে তাদের বিরত করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তিনটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ওসি আরো জানান, কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনিসুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি কলারোয়ার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা জেলায় ১০টি মামলা রয়েছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে, নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তাঁর স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারী লোকজন তুলে নিয়ে যান। পরে  তিনি কলারোয়া থানা ও খোরদো পুলিশ ফাঁড়িতে খোঁজ নিলে  জানানো হয়, পুলিশ তাঁকে আটক করেনি। রাতে কলারোয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তাও নেয়নি। ওসি বলেন, তিনি এ সম্পর্কে আর কিছু জানেন না।

আনিসুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

লুৎফর রহমান মিঠু, ঠাকুরগাঁও : হরিপুর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম হারুন অর রশিদ। পুলিশের দাবি, তিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, গতকাল দিবাগত রাতে হরিপুরের শীতলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে হারুন মারা যান। তিনি একাধিক  মাদক মামলার আসামি।