ছয় হত্যা মামলায় ইউপিডিএফের তিন নেতা আটক

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রাম শহর থেকে সোমবার দিবাগত রাতে ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠনের তিন নেতাকে আটক করা হয়। ছবি : এনটিভি

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের আহ্বায়ক তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ছয়  হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটক ব্যক্তিরা প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের দুই সহযোগী সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতা।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম শহরের ইপিজেড ও বায়েজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই অভিযানে নেওয়া ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) আহসানুজ্জামান।

আটক তিন নেতা হলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি চাকমা, বন্দর থানা শাখার সভাপতি ক্লান্তময় চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জিকো চাকমা।

সুকৃতি চাকমার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি শহরে, ক্লান্তিময় চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় এবং জিকো চাকমার বাড়ি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায়।

তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্যজিৎ বড়ুয়া ও নানিয়ারচর থানার ওসি আবদুল লতিফ। এখনো কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবিরও।

তবে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আটক ওই তিনজনের কাছ থেকে আরো তথ্য বের করার চেষ্টা করা হবে।

ডিবি সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার এসআই সৌরজিৎ বড়ুয়া ও ডিবি পুলিশের এসআই আহসানুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে অংশ নেয়। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই তিনজনকে আটক করে। আটক তিনজন নানিয়ারচরের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত বলে দাবি সূত্রটির।

ডিবি পুলিশের এসআই আহসানুজ্জামান জানিয়েছেন, নানিয়ারচর থানায় দায়ের করা দুটি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার লিখিত অনুরোধের ভিত্তিতেই এদের আটক করা হয়েছে।

গত ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমাকে নিজ কার্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হত্যার পরের দিনই শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে সশস্ত্র হামলায় নিহত হন ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) শীর্ষ নেতা তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ পাঁচ নেতাকর্মী। দুই দিনে ছয়জন হত্যার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছিল সংগঠন দুটি।

ইউপিডিএফর নিন্দা ও প্রতিবাদ

এদিকে নিজেদের তিন নেতাকে আটকের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইউপিডিএফ। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন, গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে ডিবি পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি চাকমা, বন্দর থানা শাখার সভাপতি ক্লান্তময় চাকমা ও পিসিপির চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদককে অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে যায়।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে আটক যুব ও ছাত্র নেতা সুকৃতি চাকমা, ক্লান্তময় চাকমা ও জিকো চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌথ অভিযানের নামে সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক-নির্যাতন বন্ধ এবং হত্যা-খুন বন্ধের দাবি জানান।

মামলা হয়নি সাজেক হত্যাকাণ্ডে

এদিকে গতকাল সোমবার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের করইল্যাছড়ি এলাকায় তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটকও করা হয়নি।

সাজেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আনোয়ার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতের মধ্যে একটি মামলা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে করল্যাছড়ি এলাকায় তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি উপজেলা সংগঠক জুয়েল চাকমা। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতিকে (এমএন লারমা) দায়ী করেছেন।