প্রথম আলো ‘কুরুচিপূর্ণ’ ছবি ছেপেছে : ইয়াসমিন হক

Looks like you've blocked notifications!

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের হাতে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ প্রচারের ধরনের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ইয়াসমিন হক। 

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষক বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত দৈনিকটিতে তাঁর একটি ছবি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, কার্যত তা ছিল ভুল। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ফেসবুক পাতায় ইয়াসমিন হকের বক্তব্য প্রকাশ করেন।

তাতে ইয়াসমিন হক বলেন, “৩১ আগস্ট প্রথম আলোতে আমার একটা ছবি ছাপানো হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে আমি আঙ্গুল তুলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনকে ‘শাসাচ্ছি’ এবং তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলা আমার একটি বদ অভ্যাস এবং সেই সুযোগটি গ্রহণ করে প্রথম আলো এই কুরুচিপূর্ণ ছবিটি দিয়ে জনাব আখতার হোসেনকে যেভাবে অসম্মানিত করেছে সেটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে।”

আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ইয়াসমিন হকের স্বামী ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওই বক্তব্য তাঁর ফেসবুক পাতায় প্রচার করেন। 

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বক্তব্যে বলা হয় :

“প্রফেসর ইয়াসমীন হক সবার কাছে একটি বক্তব্য দিতে চাইছেন, তার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই বলে তার অনুরোধে আমি তার বক্তব্যটি এখানে প্রকাশ করছি।
- মুহম্মদ জাফর ইকবাল
৩১ আগস্ট প্রথম আলোতে আমার একটা ছবি ছাপানো হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে আমি আঙ্গুল তুলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনকে ‘শাসাচ্ছি’ এবং তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলা আমার একটি বদ অভ্যাস এবং সেই সুযোগটি গ্রহণ করে প্রথম আলো এই কুরুচিপূর্ণ ছবিটি দিয়ে জনাব আখতার হোসেনকে যেভাবে অসম্মানিত করেছে- সেটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে।

প্রকৃতপক্ষে ৩০ আগস্ট জনাব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি মহিলা পুলিশের দল আমাকে রক্ষা না করলে আমি আরো বড় ধরনের আঘাত পেতে পারতাম এবং সেজন্যে তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবিটির জন্য আমি আজকে জনাব আখতার হোসেনের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। জনাব আখতার হোসেনকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার জন্য এবং মহিলা পুলিশের দলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আমি দুটি ছবি যুক্ত করে দিচ্ছি।
— ইয়াসমীন হক, ১.৯.২০১৫”

গত ৩১ আগস্ট দৈনিক  প্রথম আলোতে প্রকাশিত “ছাত্রলীগের হাতে শিক্ষক এবং শিক্ষকের হাতে উপাচার্য লাঞ্ছিত” শিরোনামে লেখাটির সাথে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। যাতে দেখা যায়, জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন আর তাঁর সামনে ইয়াসমিন হক তর্জনী উঁচিয়ে কথা বলছেন। 

ছবিটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল, ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন।’

প্রথম আলোতে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ও ছবিটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছিল। 

প্রসঙ্গত শাবিপ্রবির ভিসি আমিনুল হকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি, শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক ফোরাম। 

গত ১৩ এপ্রিল থেকে ভিসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে হওয়া আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি পদ থেকে লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরো ৩৪ জন শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করেন। তবে গত ২৩ এপ্রিল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভিসি দুই মাসের ছুটিতে গেলে তাঁদের আন্দোলন কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। গ্রীষ্মের ছুটি শেষে গত ১৮ জুন থেকে আবার আন্দোলন শুরু করেন এ ফোরামের শিক্ষকরা। এরপর গত ২২ জুন ভিসি ক্যাম্পাসে এলে ভিসি ভবন অবরুদ্ধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। এরপর থেকে ভিসি ভবনের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। 

গত রোববার সকালে কর্মসূচির একপর্যায়ে  উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আগের রাতে বিষয়টি জানতে পেরে একই দিন ভোর ৬টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগের কর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এরপর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্দোলনকারী পাঁচ-ছয়জন শিক্ষক সেখানে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এরপর সকাল ৮টার দিকে উপাচার্য আমিনুল হক তাঁর কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাঁকে বাধা দেন। এ সময়ে টানাহেঁচড়া ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক সৈয়দ শামসুল আলমসহ আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের একদল কর্মী শিক্ষকদের হাতে থাকা ব্যানার কেড়ে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আন্দোলনকারী শিক্ষকদের কয়েকজন উপাচার্যের কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দিতে চাইলে নারী পুলিশ সদস্য অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে সেখান থেকে নিয়ে যান।