ঈদের আগে মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি

Looks like you've blocked notifications!
এনটিভির পুরোনো ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে তাঁর সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়। আজ রোববার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

গতকাল শনিবার বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চারজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক সোয়া এক ঘণ্টা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থান করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। পরে কারাগারের বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দীকি বলেন, ‘জুনের ৫ তারিখে উনি (খালেদা জিয়া) হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। দুপুর বেলা ১টার সময়। প্রায় ৫ থেকে ৭ মিনিট উনি আনকনসাস ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না যে, কী ঘটেছিল। মাইল্ড ফর্মে একটা স্ট্রোকের মতো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যদি টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট এস্কেমিক অ্যাটাক) কারো হয়, তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে সামনে তাঁর একটা স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে।’

এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা কারাগারে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বলেছেন, তাঁর মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে। বিষয়টি জানার পর পরই আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখানেই তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে এবং সেখানে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন, কোথায় তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হবে।’

দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁরা ধারণা করছেন, তিনি মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর সুগার ফল করেছে, নাকি মাইল্ড স্ট্রোক করেছেন সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’   

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান। কিন্তু এ সরকার মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তাঁকে বন্দি করে রেখেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং মানসিক নির্যাতনের কারণে তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। এতদিন ধরে বারবার বলার পরও খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না দিয়ে সরকার কি করতে চাইছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। অসুস্থতার কথা শোনার পরও তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ না করা কোনো গভীর চক্রান্ত কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত, চোখ লাল হয়ে গেছে। এমনকি তিন সপ্তাহ ধরে তিনি জ্বরে ভুগছেন। হাঁটুর ব্যাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। তাঁর বর্তমান অবস্থা আরো খারাপ। তিনি শুক্রবার প্রায় ছয় মিনিট অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন। তখন কী ঘটেছে তা তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। খালেদা জিয়াকে ভয়ঙ্কর অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে যে কক্ষে রাখা হয়েছে তা স্যাঁতস্যাঁতে, সারা ঘরে তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করে। বাথরুম ব্যবহার উপযোগী নয়। এমন একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘খালেদা জিয়ার ব্লাড সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি ক্ষণিকের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। কারাগারে দেখা করে চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি টিআইএ (ট্রানজিন ইসমিকিক অ্যাটাক) করেছিলেন। গত ৫ জুন, দুপুর বেলা হঠাৎ করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি ৫/৭ মিনিট আনকনসাস (অজ্ঞান) ছিলেন। উনি মনেই করতে পারছেন না কি ঘটেছিল। তার এটেডেন্স যে মেয়েটি, তাঁকে অনেক কষ্ট করে বসিয়েছে। উনি এখনও কথা যে বলেন, তাতে একটু সমস্যা আছে। বাট সি ক্যান কমিউনিকেট (কিন্তু তিনি যোগাযোগ করতে পারেন)। তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া না হলে শারীরিক মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।’

সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হলে এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে বলে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের এই বিবৃতিতে বলা হয়।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার। এছাড়াও এখানে স্বাক্ষর করেন ডা. আহমেদ শফিকুল হায়দার পারভেজ, কাদের গণি চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, অধ্যাপক ডা. চৌধুরী মো. হায়দার আলী, ডা. হারুন-আল-রশিদ, ডা. শহিদ হাসান, কৃষিবিদ আনোয়ারুন নবী মজুমদার (বাবলা), অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রশীদ, প্রকৌশলী আফজাল হোসেন সবুজ, ডা. এ. কে. এম. মাসুদ আক্তার জিতু, অধ্যাপক ডা. মো. আকরাম উল্লাহ শিকদার, অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুর রহমান, ডা. সাহাদাত হোসাইন, কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান (তুহিন), কৃষিবিদ ডা. একেএম নাজমুল হক (লিটু), অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মেজবাহ-উল-ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা কামাল আকন্দ, এ.কে.এম. ওয়াহিদুজ্জামান এ্যাপোলো, ড. মোহাম্মদ আমির হোসাইন ভূইয়া, ড.আবুল হাসানাত মো.শামিম, প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, রাশীদ মাহমুদ, ড. শেখ মনির উদ্দিন, প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম প্রমুখ।