রাঙামাটিতে ভারি বৃষ্টি, আতঙ্ক

Looks like you've blocked notifications!

টানা বর্ষণে সড়ক ও পাহাড়ে ধস, ফাটল এবং গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে। গতকাল রোববার সকালে ভারি বৃষ্টি হয়। এর পর থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যা নাগাদ তীব্রতা বাড়ায় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধস, ফাটল এবং গাছ ও বিদ্যুতের পিলার উপড়ে পড়ার খবর আসতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতাও।

শহরবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে রাতেই মাঠে নামেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তাপস শীলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন স্থানে ধসের নিচে চাপা পড়া স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া এবং সড়কের ওপর পড়া গাছ কেটে সড়ক জঞ্জাল পরিষ্কার করার কাজে প্রাণান্ত পরিশ্রম করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও।

গতকাল সকাল থেকেই শহরজুড়ে দফায় দফায় মাইকিং করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে সরে যেতে। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে খুব কম মানুষই।

ফলে সন্ধ্যা থেকেই কার্যত বিদ্যুৎবিহীন শহরে পরিণত হওয়া রাঙামাটির বিদ্যুৎ কখন আসবে, জানাতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপাকে পড়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন দ্রুত শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দিদারুল আলম জানিয়েছেন, শহরের চম্পকনগর, আনসার ক্যাম্প এলাকা, উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক ও ভবনের পাশের মাটি সরে পড়া, সড়কের ওপর গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়ায় এখন সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘চারদিক থেকে আতঙ্ক এবং টানা বৃষ্টির কারণে আমিও ঘরে বসে থাকতে পারিনি। শহরবাসীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং ত্বরিত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকাল থেকেই রাত অবধি মাঠেই আছেন। আমি নিজেও রাতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেব।’

এদিকে, রাত পৌনে ২টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিল শহরে। তবে তীব্রতা ছিল সন্ধ্যার পরের চেয়ে কিছুটা হলেও কম। কিন্তু ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে রাত জেগেই ছিল শহরবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কতামূলক নানান পরামর্শ ও পোস্ট দিচ্ছিলেন সবাই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের  নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভও প্রকাশ করছিলেন অনেকেই।

২০১৭ সালের ১২ জুন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি টানা ভারি বর্ষণের কারণে সৃষ্ট পাহাড় ধসে রাঙামাটি পৌর এলাকা এবং জেলার কাউখালী, কাপ্তাই, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় অন্তত ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পাহাড় ধসে মাটি পড়ে অচল হওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক চালু করতে যাওয়া পাঁচ সেনা কর্মকর্তা ও  জওয়ান। টানা ১৭ দিন সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল পার্বত্য শহর রাঙামাটির।