সৌদিতে বার বার বিক্রি হতেন বাংলাদেশের নারীরা

Looks like you've blocked notifications!
সাংবাদিকদের সামনে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরছেন এক নারী। ছবি : এনটিভি

নির্যাতনের শিকার হয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসছেন। ফিরে আসা এসব নারীরা জানালেন, নির্যাতনের শিকার অনেক নারী দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন।

আজ সোমবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সৌদি থেকে ফিরে আসা ওই নারীদের কয়েকজন।

নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসা নারীদের অনেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট করলেন যে, তাঁরা ‘বার বার বিক্রি হতেন’। নতুন নতুন মালিক তাঁদের কিনে নিয়ে নির্যাতন চালাতেন দাস-দাসী মনে করে।

তেমনই এক নারী জানালেন, ‘তিন চারদিনের জন্যও তাঁদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এক হাজার রিয়েলের বিনিময়ে বিক্রি করা হতো। সময় শেষ হলে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হতো পুরোনো মালিকের কাছে।’

সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে এক নারী বলেন, ‘আমারে রিয়াদে বেচছে, দাম্মাম, আল কাসিয়া অনেক বেচাকেনা হইসে।’ কাঁদতে কাঁদতেই তিনি জানালেন, নির্যাতনের পর বহু নারীকে হত্যাও করা হয়। তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার বিষয়টি কল্পনাই করেননি।

গত তিন বছরে সৌদি আরব থেকে প্রায় পাঁচ হাজার নারী নির্যাতিত হয়ে ফিরে এসেছেন, এর মধ্যে চলতি বছরেই ফিরেছেন অন্তত এক হাজার নারী। ফিরে আসা নারীরা জানালেন, হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন। নারীরা সেখানে কী পরিমাণ অত্যাচারের মধ্যে আছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেন ফিরে আসা এক নারী। তিনি সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশের সব নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

তবে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশে ফেরার পরেও শুরু হয় নতুন সমস্যা। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, ‘তাঁরা দেশে ফেরত আসার পর কিন্তু আরেক ধরনের সংকটে পড়ছেন। অনেক সময় তাঁর পরিবার, তাঁর স্বামী, এমনকি বাবাও তাদেরকে একসেপ্ট করতে চাচ্ছে না।’

নির্যাতনের শিকার বিদেশ ফেরত ২২ বাংলাদেশি নারীকে ব্র্যাক ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন এলএফএমইএবি-এর আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী নারীদের অনেকেই এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমাদের কোনো নারী তার অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, লাঞ্ছিত না হয়, অপমানিত না হয়, নির্যাতিত না হয় এবং তাঁর মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়। এটা করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করলেই তাহলে যে রেমিটেন্সটা আমরা বিদেশ থেকে পাচ্ছি সেই রেমিটেন্সটা অর্থপূর্ণ হবে।’