বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

Looks like you've blocked notifications!
টানা ভারি বর্ষণে বান্দরবানের কেরানীহাট-চট্টগ্রাম সড়কের বরদুয়ারাসহ কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়ক কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি : এনটিভি

অবিরাম ভারি বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পাড়ের অনেক বাড়ি স্রোতে ভেসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, প্রধান সড়কে পানি ওঠায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আজ মঙ্গলবারও জেলায় থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

মৃত্তিকা পানি সংরক্ষণ কেন্দ্র বান্দরবানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবানে ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন বৃষ্টিপাত হয়েছিল ২৪ ঘণ্টায় ২০২ মিলি মিটার। বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমেছে। থেমে থেমে হলেও বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’

টানা বর্ষণে জেলা শহরের ইসলামপুর, আর্মিপাড়া, মেম্বারপাড়া, ওয়াবদা ব্রিজসহ লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

অবিরাম বর্ষণের ফলে বান্দরবানের বনরুপা পাড়া, ইসলামপুর, কালাঘাটাসহ বিভিন্ন সড়কে পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দারা আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে।

এদিকে, প্রবল বর্ষণে বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বেইলি ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় দুই দিন ধরে রাঙামাটির সঙ্গে এবং পাহাড় ধসের কারণে রুমা উপজেলার সঙ্গে বান্দরবান জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

টানা ভারি বর্ষণে বান্দরবানের কেরানীহাট-চট্টগ্রাম সড়কের বরদুয়ারাসহ কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়ক কয়েক ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি : এনটিভি

দূর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, গত রোববার ভোররাত থেকে বান্দরবানে ভারি বর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টিতে বান্দরবান কেরানীহাট চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়া, বরদুয়ারা, আমতলীসহ কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়কটির চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর পাহাড়ধসের কারণে রুমা উপজেলার সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

রুমা, থানচিসহ অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের কারণে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ধসে অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা এক হাজার ৪৪৪টি। দ্রুত তাদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলার সাত উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। বান্দরবান-কেরানীহাট চট্টগ্রামসহ তিনটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।’

সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

বান্দরবানে গত রোববার ভোর রাত থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়ে আজকেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সাঙ্গু নদীর পানি। ছবি : সংগৃহীত