‘শিক্ষকতায় এসে বিয়ে পর্যন্ত করতে পারিনি’

Looks like you've blocked notifications!

এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক প্রভাষক অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করে শিক্ষাকতা পেশায় এসে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। বিয়ে পর্যন্ত করতে পারিনি। বর্তমানে ছোট বোনের বিয়ের খরচ জোগাতে পারছি না। শিক্ষাকতা পেশায় এসে কি তাহলে ভুল করেছি? বাধ্য হয়ে এখন আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।

আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রেসক্লাবের উল্টো পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে এভাবে নিজের কষ্টের কথা সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন অরুণ কুমার।

আট দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। আগামীকালও চলবে এ কর্মসূচি। গতকাল শনিবার ঈদের দিনও শিক্ষকরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাকায় রাজপথে নামাজ পড়েছেন। পরে তাঁরা ভুখা মিছিল করেন।    

বরিশালের জল্লা ইউনিয়নের আইডিয়াল কলেজের ইতিহাসের বিভাগের প্রভাষক অরুণ কুমার বিশ্বাস। তিনি গত ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু এখনো তাঁর চাকরি এমপিওভুক্ত হয়নি।

অরুণ কুমার বলেন, ‘চাকরির বেতন পাই না। টিউশনি করে চলতে হয়। আমার মতোই এমন অসংখ্য শিক্ষক দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে বেতন পাচ্ছেন না। পরিবার-পরিজনের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই জীবনবাজি রেখে তাঁরা ঢাকায় এসে এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন।’

অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষকরা ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’, ‘এমপিও না দিলে, বাড়ি ফিরে যাব না’, ‘এক দফা এক দাবি, এমপিওভুক্তিকরণ চাই’- স্লোগান দেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শিক্ষক-কর্মচারীরা। নিজেদের অধিকার আদায়ে অনেক নারী শিক্ষক ছোট সন্তান রেখেই এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন বলে জানান।

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘বেতন না পাওয়ায় তাঁরা রাজপথে ঈদ পালন করেছেন। তাদের পারিবারের সদস্যরাও না খেয়ে আছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমপিওভুক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, রমজান ও ঈদের জন্য আমাদের আন্দোলন (অবস্থান কর্মসূচি) আধা বেলা হলেও আজ থেকে দিনরাত কর্মসূচি পালিত হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এমপিভুক্ত করা না হবে ততক্ষণ আমরা রাজপথেই অবস্থান করব।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা আরো বলেন, তাঁরা বেতন-ভাতার জন্য পরিবার ছেড়ে রাজপথে নেমেছেন। ঈদের দিনেও পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেননি। একটু মিষ্টি মুখে দেওয়ার ভাগ্যও হয়নি। ন্যায্য দাবি আদায়ে তাঁদের স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।

এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁর তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, নতুন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে।

কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে তিনি নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা থেকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে।

এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। তবে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয় ও কলেজ নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।