অজ্ঞান না হলে বস্তি ছাড়তে হতো আর্জেন্টিনার সমর্থককে!

Looks like you've blocked notifications!

ছাত্তার আলী (৪০) পেশায় রিকশাচালক। থাকেন রাজধানীর কাজীপাড়ার একটি বস্তিতে। জনিরদ্দীন মণ্ডলও একই এলাকার বাসিন্দা। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে হেরে যাওয়ায় দুজনের ভেতরে তুমুল বাকবিতণ্ডা বাধে। একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার শেষ হয় বাঁশের আঘাতে ছাত্তার আলীর অজ্ঞান হওয়ার মধ্য দিয়ে।

আজ শুক্রবার সকালে ছাত্তার আলী বলেন, ‘কী আর কবো (বলব) ভাই, ব্রাজিলের লোকজনের কথার জন্যি টিকতি (টিকতে) পারতিনি। প্রথম গোল খাওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছিল, আমি মহা অন্যায় করি ফেলিছি। আর তিনডা হয়ে গেলে মনে হলো, রাতেই রিকশা-টিকশা ছাড়ি বস্তি ছাড়তি হবে। মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে না গেলে মনে হয় বস্তি ছাড়তেই হতো! তয় আর আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করা যাবে না। এরাও শুধু কাঁদায়!’ হাতাহাতি পর্যন্ত গেল কীভাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জনিরদ্দীন ব্রাজিল করে। প্রথম দিন আর্জেন্টিনা ড্র করার পরে অন্য একজনের সাথেও বাধছিল তার। আজ আমার সাথে। আমি শুধু বলছি, আমরা সাতটা গোল খাইনি! এখনো আমি কেন কথা বলছি বলেই ওমনি শুরু করে দিল মারপিট! আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, ব্রাজিলও হারবে!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনিরদ্দীন মণ্ডল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি তাকে চুপ করতে বললেও সে করেনি। গতদিন ব্রাজিল ড্র করলে এরা সবাই মিলে আমাকে ধরেছিল। কাল মাথাটাথা ঠিক ছিল না। কী তে কী (কী থেকে কী) হয়ে গেছে, নিজেও জানি না। ছাত্তার কিন্তু আমার চাচাতো ভাই। আমাদের আসলে খেলা নিয়ে এতটা করা ঠিক হয়নি।’

শুধু ছাত্তার কিংবা জনিরদ্দীন নন, এমন অনেক আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ভক্তের মধ্যে খেলা নিয়ে চলে কথার লড়াই। কখনো এটা এতটাই বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যা মুখ দেখাদেখিও থাকে না। হেরে যাওয়া দলের ভক্তরা ভয় পায় বাড়ির বাইরে যেতে। এমনকি অফিসে যেতেও। এমন আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন হুমায়ুন আহম্মেদ (২৯)। ব্রাজিল সমর্থকদের ভয়ে তিনি আজ অফিস যাননি! কথা হলে তিনি বলেন, ‘চাকরি গেলেও আজ অফিস যাচ্ছি না। তবে অফিসে খুব শরীর খারাপ বলে ছুটি নিয়েছি। আসলে তো ভয় হচ্ছে ব্রাজিল সাপোর্টারদের কথার। বিশ্বকাপ ফুটবল তথা আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল নিয়ে যে বাজে সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে, তা ভয়াবহ! কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলে না। বরং খারাপ ব্যবহার করে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের সকলকে বের হয়ে আসা উচিত।’

রাজীব হায়দার নামের একজন বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি, আব্বা আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। আমিও সে সময় থেকেই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। গতকাল আর্জেন্টিনা হারল। তার পর থেকেই ফেসবুকে ঢোকা মুশকিল হয়ে উঠেছে। বন্ধু, কলিগ কিংবা ফেসবুকের পরিচিতদের খোঁচা মারা মেসেজে অতিষ্ঠ আমি! ফোনকল তো আছেই। আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই জ্বালা সহ্য করতে হবে, যদি সত্যিই আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডই পার হতে না পারে।’

কথা হয় কয়েকজন ব্রাজিল সমর্থকের সঙ্গে। তাঁরা প্রায় একই ধরনের কথা বলেন। তাঁদের ভেতরে ফয়সাল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররাও খোঁচা মারে সুযোগ পেলে। ব্রাজিলও মারে। এটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটা কিন্তু শুধু ব্রাজিলের কারণে হয়নি, একই কাজটা আর্জেন্টিনাও করে। এই সংস্কৃতি ভালো কি খারাপ, সেই প্রশ্ন অবশ্য রাখে।’

শাহীন হোসেন নামের একজন বলেন, ‘আমি ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক। তবে গতকাল শুধু মেসির জন্য খারাপ লেগেছিল। ওয়ান ম্যান শো দিয়ে আর কী-ই বা হবে? মেসির পাশে দাঁড়ানোর মতো তো কেউ নেই। মেসি অবশ্যই ভালো ফুটবলার। একটি কাপ তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু সেই সুযোগ বোধ করি আর হবে না তাঁর। একটা বিষয় দেখেন, মেসির জন্য আমার খারাপ লাগলেও কিন্তু আমার খোঁচা মারা স্ট্যাটাস দেওয়া বন্ধ হয়নি। বন্ধ হয়নি বন্ধুদের জ্বালানো। এতে আমি মজা পাই। অবশ্য নিজেকে যখন লোকে বলে, তখন কিন্তু বিরক্তই লাগে!’