গাজীপুর সিটি নির্বাচন : যেসব তথ্য জেনে রাখতে হবে

Looks like you've blocked notifications!

উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা করেছেন প্রার্থীরা। এ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আর মাত্র তিনদিন বাকি। এরই মধ্যে এবারের এ নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। প্রার্থীরা ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ছুটছেন ভোটারদের কাছে। গাজীপুরের এ নির্বাচনে মেয়র পদের তালিকায় সাত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকলেও সবার দৃষ্টিই এখন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর দিকে। উভয় জোটের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে নানা পরিকল্পনায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ফেলবে এমন ধারণায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধান এ দুই জোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। তাঁরা নিজ জোটের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীকে বিজয়ী করতে সমর্থন আদায়ের জন্য ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। তাঁরা নানা কৌশলে ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে স্মরণকালের সবচেয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পুরো নির্বাচনী এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো কোনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকছে। আর তিনটি ওয়ার্ড মিলে থাকছেন একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া বিজিবি, পুলিশ, র‍্যাব আর আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মিলে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে জোরদার করা হয়েছে প্রার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, প্রার্থী ও ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল প্রশ্ন তুলতে না পারে এ জন্যই এমন কড়া নিরাপত্তা থাকছে বলে নির্বাচন কমিশন বলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচন সুষ্ঠ করতে পুরো গাজীপুরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান বলেন, আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। আগামী ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে সব ধরনের প্রচারণা শেষ হচ্ছে। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) আলহাজ অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে। তাঁরা ছাড়াও  মেয়র পদপ্রার্থীর তালিকায় আরো পাঁচ প্রার্থীর নাম রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠ করতে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

বিএনপিসহ অন্য দলের তরফ থেকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করা হচ্ছে। তবে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সেনা বাহিনী মোতায়েনের কোনো প্রয়োজন হবে না। প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গেও এ নিয়ে মতবিনিময় করেছেন তাঁরা।

মোট ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত। ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। পুরুষ ও নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। ভোটকেন্দ্র ৪২৫টি। যার মধ্যে ৩৩৭টি গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ, যানবাহন যাতায়াতের সুবিধা- অসুবিধা, আলোকিত রাখার ব্যবস্থা, স্থানীয় প্রভাবসহ নানা বিষয়কে বিবেচনায় এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ বলছে নির্বাচন কমিশন। বাকি ৮৮টি সাধারণ ভোটকেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে যাতায়াতসহ সার্বিক ভোট মনিটরিং করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ।

গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকছে। নির্বাচনের আগে ও পরে মোট চারদিনে  (২৪ জুন হতে ২৭ জুন পর্যন্ত)  ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া আরো ১০ জন অতিরিক্ত হিসেবে সর্বমোট ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আর একই সময়ের জন্য প্রতি তিনটি ওয়ার্ড মিলে একজন করে মোট ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। সিটি নির্বাচনে এবার স্মরণকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

রাসেল শেখ বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩৩৭টির প্রতিটিতে আনসার ও পুলিশ ২৪ জন করে এবং ৮৮টি সাধারণ কেন্দ্রের প্রতিটির জন্য ওই সংখ্যা হবে ২২ জন। সর্বমোট ১০ হাজার পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া র‍্যাবের ৫৭টি ওয়ার্ডের ৫৭টি টিম এবং একটি রিজার্ভ টিম থাকবে। যার প্রতিটি টিমে সদস্য সংখ্যা থাকবে ১০ জন করে। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৯ প্লাটুন বিজিবি থাকবে, প্রতি প্লাটুনে ২০ জন করে বিজিবি সদস্য থাকবে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা  এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা,  র‍্যাবের ৫৮ জন মোবাইল ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স টিমের ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় পেট্রল, মোবাইল পার্টিসহ  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল টিম থাকবে।

যদিও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলছেন, চলতি বছরের ৩১ মার্চ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। সেই অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে দেড় হাজারের বেশি অপরাধী। এদের মধ্যে এক হাজারের বেশি মাদক ব্যবসায়ী। দুজন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। সেই অভিযানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

২৫ জুন দিবগত রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সিক্যাব, বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, ট্যাম্পু ইত্যাদির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৭জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বহিরাগতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা

বহিরাগতদের জন্য এলাকার বাসিন্দা নয় বা ভোটার নয় তাদের ২৩ জুন দিবাগত রাত ১২টার আগেই নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে হবে।

বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নিষিদ্ধকরণ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯ জুন হতে ৩ জুলাই পর্যন্ত সব আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের অস্ত্র বহন অথবা অস্ত্রসহ চলাফেরা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন জেলা প্রশাসক।

নির্বাচনী প্রচারণা নিষেধাজ্ঞা

আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ বজায় রাখতে  ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৮ জুন দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায়  নির্বাচনী জনসভা  আহ্বান,  কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান বা মিছিল, শোভাযাত্রা সংগঠিত করতে পারবে না।

গুজবরোধে নজরদারি

ভোটগ্রহণের দিন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সমন্বয় সাধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জঙ্গি তৎপরতার গুজব রটানোরোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) বলতে যা বুঝায় নির্বাচনে সেটি নিশ্চিত করা হবে।

প্রার্থীদের গণসংযোগ

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল শুক্রবার মহানগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কলাবাগানে পথসভায় বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন। পরে তিনি ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি মজলিশপুর, বাংলাবাজার, বিপ্রবর্থা, খালপাড়া, সালনায় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গেইট, টি অ্যান্ড টি রোড, শাপলা ম্যানশন ও অনুপম সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন। দুপুরে তিনি  চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে পথসভার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফা প্রচারণা শুরু করেন। এর মধ্যে তিনি টঙ্গীতে মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথসভায় যোগ দেন। সকাল থেকে গণসংযোগকালে খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রার্থীর সঙ্গে পথসভা এবং গণসংযোগ করেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম মসজিদে জুমা নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি ইসলামিক দল এবং ইসলামিক সংগঠনের যাঁরা আলেম আছেন সবার সহযোগিতা চেয়েছি। মহানগরীর ১৮০০ মসজিদের খতিব, সারে ৪০০ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং তাবলিগ জামাতে মুরব্বিরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাকে নৌকা মার্কায় সমর্থন দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমাকে ভোট দেন, নৌকাকে ভোট দেন। আমি ক্লিন এবং গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই। সবাইকে একটি বাসযোগ্য শহর দিতে চাই।’

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন এলাকায় দিনভর গণসংযোগ করেন। নৌকা প্রতীকের পক্ষে ওলামা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আখতার হোসেন বোখারী মহানগরীর ৪০, ৪১ নম্বর পুবাইল এলাকায় গণসংযোগ করেন। টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা চেয়ারম্যান মাজহুরুল ইসলাম তালুকদার টঙ্গীতে প্রচারণা চালিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলের প্রায় অর্ধশত নেতা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক গণসংযোগ করেন।

বিএনপি : ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার শুক্রবার দিনব্যাপী সাবেক বাসন ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তিনি সকাল ৯টায় বাসন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের  মোগরখালে পথসভার মাধ্যমে তাঁর শুক্রবারের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। মাঝে জুমার বিরতি নিয়ে তিনি টি অ্যান্ড টি কলোনি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন এবং মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তিনি মুসল্লিদের কাছে দোয়া চেয়ে বক্তৃতাও করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে বাসন অঞ্চলের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের যোগীতলা নতুন বাজার, চান্দনা মোশারফের স্কুল (দক্ষিণপাড়া), ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িয়ালী নগপাড়া মণ্ডল বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাজীম উদ্দিন মার্কেট, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাহাটা রাস্তার মাথা, হক মার্কেট ও কাউন্সিলর ফয়সাল সরকারের অফিস প্রাঙ্গণে পথসভা করেন।

পথসভায় বক্তৃতায় হাসান সরকার বলেন, এটি সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়, এটি একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তাই জনগণের রায়কে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কাজেই গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে ভোটের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করার জন্য তিনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান। দুপুরে হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে পথসভায় যোগ দেন বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মীর নাসির উদ্দিন, সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালু। তাঁদের সঙ্গে আরো ছিলেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সহসভাপতি মীর হালিমুজ্জামান ননী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ, আলাউদ্দিন চৌধুরী, মুফতি নাসির উদ্দিন, বসির আহমেদ বাচ্চু, অ্যাডভোকেট মনির হোসেন ও আতাউর রহমান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় টিমের প্রচারণা

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ধানের শীষের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী ড. মাজহারুল আলম জানান, নগরির ৫৭টি ওয়ার্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় ৫৭টি নির্ধারিত টিম গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার গণসংযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান,  বরকতউল্লাহ বুলু, আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেরা আলাউদ্দিন, ওমর ফারুক শাফিন,  একরামুল হক বিপ্লব, সালাহ উদ্দিন ভূইয়া শিশির। এ ছাড়া গণসংযোগ করেছেন মীর নাসির, ড. ফরহাদ হালিম, হেলালুজ্জামান লালু।

গাজীপুরে খুলনার মেয়র খালেক

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন খুলনা সিটির নতুন মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। শুক্রবার সকালে ছয়দানার এলাকায় জাহাঙ্গীরের বাসা থেকে বের হয়ে তার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নেতা তালুকদার খালেক।

গণসংযোগে অংশ নিয়ে খুলনার মেয়র তালুকদার খালেক আওয়ামী লীগের উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

খুলনা সিটির মেয়র ২২, ২৩ ও ২৪ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন প্রচার চালানোর জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণসংযোগের পর যে সময় টুকু আছে, সেই সময়ে আমাদের নেতা-কর্মী যাঁরা আছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি আপনারা সবাই মানুষের বাড়ি বাড়ি যাবেন, ভোটারদের কাছে যাবেন। প্রার্থী সম্পর্কে এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমরা কী চাই, তা তাঁদের বোঝাবেন।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুল শামীম হাদী, যুবলীগ নেতা আব্দুল কাদের, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলম।

ইসলামী আন্দোলন : দলটির মেয়র প্রার্থী (হাত পাখা) নাসির উদ্দিন সালনা বাজার এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শেষে তিনি চান্দনা চৌরাস্তা জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। একই মসজিদে আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থী আলহাজ জাহাঙ্গীর আলমও নামাজ আদায় করেন। প্রার্থীদ্বয় নামাজের আগে উপস্থিত মুসল্লিদের সামনে নিজেদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গাজীপুর সিটির উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দকৃত বাজেটের শতভাগ ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। সেই হিসেবে নগরবাসী আমাকে তাদের খাদেম হিসেবে নির্বাচিত করলে বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি পয়সাও দুর্নীতি হবে না, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।’ এরপর বিকেলে তিনি শহর শাখার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম জয়দেবপুরে গণসংযোগ করে এবং ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মোজাহিদের নেতৃত্বে যুব আন্দোলনের একটি টিম কাশিমপুর সাংগঠনিক শাখায় নির্বাচনী গণসংযোগ করে।