কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে অনিশ্চয়তা

Looks like you've blocked notifications!

কুয়াকাটায় লগ্নিকারক, পর্যটক ও স্থানীয় লোকজন ফের শঙ্কায় পড়েছেন। সাগরের ভাঙন রোধে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন এ বছর অনিশ্চিত হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাঠানো সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানোয় এমন অনিশ্চয়তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী বছরেও এটি বাস্তবায়ন হবে, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়িত্বশীল বিভাগ। এরই মধ্যে এ বছরের বর্ষা মৌসুমের প্রথম অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার তিন দিনে ছয় দফা হানা দেয় সৈকতের বেলাভূমে। প্রায় ১০ ফুট প্রস্থ সৈকত সাগর গিলে খেয়েছে। এখন কুয়াকাটা পৌর এলাকাসহ পর্যটন এলাকার মানুষ ও তাদের সম্পদসহ সব ধরনের স্থাপনা রক্ষায় বেড়িবাঁধটিও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধের রিভার সাইটের স্লোপসহ মূল বাঁধ সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশল কার্যালয় থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠায়। সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়, যা অনুমোদন শেষে এ বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরুর সম্ভাবনা ছিল। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয়-বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে দুই দিকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত এলাকা নিয়ে এ প্রকল্পের সম্ভাব্য এলাকা ছিল। পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার পুবে সৈকত রক্ষায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা ছিল। গ্রিন সি ওয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে শোরলাইন বরাবর স্থির থাকা। সৈকতের দেশভাগে গ্রিন সি ওয়ালের ওপর দিয়ে পর্যটকরা হাঁটাচলা করা। সি ওয়ালের ওপর ঘাস লাগানো পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন। পর্যটক-দর্শনার্থীরা পেত সি ওয়ালে বসে সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ। সি ওয়ালটি অবস্থানভেদে ২১ মিটার প্রস্থ এবং দুই-আড়াই মিটার উঁচু করার পরিকল্পনা ছিল। গ্রিন সি ওয়ালের সামনের দিকে উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডব ঠেকাতে নির্দিষ্ট অ্যালাইনমেন্ট বরাবর সাগরের অন্তত তিন মিটার গভীর তলদেশে জিও টিউব বসানো কথা ছিল। যার ফলে পলি জমে বিচের পরিধি আরো বাড়ত। প্রশস্ত হতো। জিও টিউবটি এমনভাবে বসানোর পরিকল্পনা ছিল যে জোয়ারের সময় এটি পানির নিচে থাকত। পর্যটকের দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হতো না। জিও টিউবের ওপর দিয়ে সহজেই নৌকাসহ জলযান সাগর অভ্যন্তর থেকে বেলাভূমে ভিড়তে পারত। সৈকতের ভাঙন রোধে এবং আগের প্রশস্ততা ফিরে আনার জন্য এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল বলে পাউবো সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুই থেকে আড়াই মিটার উচ্চতার টপে প্রস্থ তিন মিটার। নিচে প্রস্থ প্রায় ১৪ মিটার থাকার প্রস্তাবনা ছিল। কিন্তু এ প্রকল্পটি অনুমোদন এখনো মেলেনি। কিংবা সৈকত রক্ষায় বিকল্প কোনো উদ্যোগ এ বছর এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি; বরং বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই উত্তাল ঢেউ এক দফা হানা দিয়ে সৈকতের পরিধি অনেকটা খাটো করে দিয়েছে। ফলে কুয়াকাটার সৌন্দর্যমণ্ডিত সৈকতসহ গোটা এলাকা এখন সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বিলীনের শঙ্কায় পড়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন লগ্নিকারকসহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য এ প্রকল্প প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হয়েছিল, যা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ফের বিস্তারিত সমীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। যার জন্য এ বছর সাগরের ভাঙন রোধে সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কাজ অনিশ্চিত হয়ে গেল। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি প্রটেকশনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

এরই মধ্যে গত ১০ বছরে কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ এলাকা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সৈকতের বেলাভূমে এখন আর জোয়ারের সময় ওয়াকিং জোন থাকে না। মনোলোভা এ সৈকতের হাজার হাজার নারিকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সাগরের উত্তাল ঢেউ গিলে খেয়েছে। সবশেষ ঈদের আগে ও পরে তিন দিনের অস্বাভাবিক জোয়ার লণ্ডভণ্ড করে দেয় সৈকতের প্রায় ১০ ফুট প্রস্থ দীর্ঘ এলাকা। ঝুঁকিতে পড়েছে কুয়াকাটা সৈকত ঘেঁষা পার্কসহ ফার্মস অ্যান্ড ফার্মসের অবশিষ্টাংশ। এখন ঝুঁকির শঙ্কায় রয়েছে কুয়াকাটা পৌর এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ। ২০০৪ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, এ প্রকল্প কুয়াকাটার উন্নয়নে বহুল কাঙ্ক্ষিত ছিল। এখন অনিশ্চয়তার কারণে আমরা শঙ্কিত রয়েছি।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ড. মো. মাছুমুর রহমান জানান, কুয়াকাটা সৈকতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ট্যুরিজম পার্ক এলাকাসহ পর্যায়ক্রমে সৈকতের বেলাভূমি ঢেউয়ের তোড়ে বিলীন রোধে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা জরুরি প্রটেকশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কুয়াকাটার উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার বাস্তবায়ন চলছে। এ নিয়ে কারো  শঙ্কার কিছুই নেই।’ তবে এখানকার মানুষ কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।