গাজীপুর সিটি করপোরেশন

শেষ হলো ভোট, চলছে গণনা

Looks like you've blocked notifications!

বিএনপির নানা অভিযোগ, জাল ভোট-ব্যালট পেপার ছিনতাই আর কারচুপির অভিযোগে সাতটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত, একটি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষসহ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছেন আলোচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সিটি করপোরেশনের ৪২৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে টানা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলছে ভোট গণনা। সন্ধ্যার পর থেকেই মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর এই তিনটি পদের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা প্রতিটি কেন্দ্র থেকে ভোটের বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল পেয়ে যাবেন। রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা এই নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করবেন। যদিও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও ফলাফলের ‘এক ধরনের আভাস’ মিলে।

সকালে একটু বৃষ্টি থাকায় তখন ভোটের লাইনে ভিড় ছিল কম। কিন্তু রোদ উঠার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের লাইন বড় হতে থাকে। বিশাল এই সিটি করপোরেশন এলাকায় জাতীয় সংসদের তিনটি সংসদীয় আসন রয়েছে।

নির্বাচন চলাকালীন বিএনপি অভিযোগ করেছে, দুই শতাধিক কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে একে বিএনপির ‘চিরাচরিত অভ্যাস’ বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগ।

পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন থেকে দুপুরে জানানো হয়েছে, সব শেষ অনিয়মের অভিযোগে সাতটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। আর একটি কেন্দ্রে আধা ঘণ্টার জন্য ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল।

ভোটকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ বা গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। বরং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে দেখা গেছে, রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা ভোট প্রয়োগ করেছেন।

এই নির্বাচনে ৪২৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। মোট সাত মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৫৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরো প্রার্থী থাকলেও গাজীপুর সিটির মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের (নৌকা) মনোনীত জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির (ধানের শীষ) মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার। সকালে নগরীর বশিরউদ্দিন উদয়ন একাডেমি স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন বিএনপির প্রার্থী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নগরীর কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনে চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার-২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয় (ভোটার-২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২৮২৭), রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-১৯২৭) ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭) এ ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হয়।

এর আগে ২০১৩ সালে এ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান নির্বাচিত হন। অধ্যাপক মান্নান মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও সরকারের রোষানলে পড়ে গত পাঁচ বছরের অধিকাংশ সময় তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।

৭ কেন্দ্র স্থগিত

দুপুর ৩টার পর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘ভোটে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৭২ নম্বর কেন্দ্র টঙ্গীর খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়-১, ৩৭৩ নম্বর খরতৈল মনসুর আলী আদর্শ বিদ্যালয়-২, টঙ্গীর বড় দেওড়ার হাজি পিয়ার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৯৮ নম্বর কেন্দ্র বাসন এলাকার ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৭৪ বিন্দান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, ৩৪২ জাহান পাবলিক দত্তপাড়া ও ৬১ এমইএইচ আরিফ কলেজ কোনাবাড়ী কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’

এক কেন্দ্রে আধা ঘণ্টা স্থগিত

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবাড়ী হাক্কানিয়া ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসা ২-এর ভোটকেন্দ্রের নারী বুথে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এ সময় সেখানে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়জন আহত হন।

ভোট বন্ধের দাবি

শতাধিক কেন্দ্রে জাল ভোট, কেন্দ্র থেকে দলীয় এজেন্টদের বের করে দেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তবে নির্বাচন কমিশন যদি ভোট বন্ধ না করে, তাহলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।

হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘শতাধিক কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি নির্বাচন বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে আমি লিখিত দেবো নির্বাচন বন্ধ করার জন্য।’

তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার অঙ্গীকার করে বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘আমি যদি না থাকি, তবে সরকারের মূল চরিত্রটা আপনারা উপলব্ধি করতে পারবেন না।’  

‘নির্বাচন বন্ধ করে দিলে আমি থাকব না। বন্ধ না করলে তো আমি আছি,’ এক প্রশ্নের জবাবে যোগ করেন হাসান উদ্দিন সরকার।

‘বিএনপি চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী মিথ্যাচার করছে’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সরকারকে সম্পৃক্ত করে এ ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে অগণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছে।

জাহাঙ্গীর কবির নানক আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিতর্কিত এবং গাজীপুরবাসীকে অপমান করার জন্য বিএনপি চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মিথ্যাচার করছে।