বললেন মুন্সীগঞ্জের এসপি

প্রকাশক বাচ্চু খুনের ঘটনায় জেএমবি জড়িত

Looks like you've blocked notifications!
লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ছবি : এনটিভি

মুন্সীগঞ্জে লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুর রহমান গ্রেপ্তারের তিনদিনের মাথায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ঢাকা বিভাগের সামরিক কমান্ডার বলে পুলিশ দাবি করেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, তিন মাস আগে গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের খাসমহল এলাকায় প্রবাসী ইয়াকুব আলীর একটি বাসা ভাড়া নেন জেএমবি নেতা আবদুর রহমান। সেখানে বসে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জেএমবি সদস্যরা। আবদুর রহমান নিজে গুলি করে প্রকাশক বাচ্চুকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে চারজন সরাসরি ছাড়াও আরো দুজন জড়িত। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা গেছে। জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই হত্যা করা হয়। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত পরে বলা যাবে।

লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুর রহমান গ্রেপ্তারের তিনদিনের মাথায় গতকাল বুধবার রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। ছবি : এনটিভি

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পর সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ, এন্টি টেররিজম ইউনিট, পুলিশ হেডকোয়াটার্স ইন্টিলিজেন্স উইং, বগুড়া জেলা পুলিশ এবং গাজীপুর জেলা পুলিশের টিমের সহায়তায় গত ২৪ জুন রোববার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামে একটি দুইতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় আবদুর রহমান ওরফে লালু, সাঈদ, আক্কাস ও কাওসারকে (৩৪)। আবদুর রহমান পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকাইয়াপাড়ার বাসিন্দা।

আবদুর রহমানের দেওয়া তথ্য মতে, তাঁর ঘরের শ্রীপুরের  ঘরের আলমারির ড্রয়ারের নিচ থেকে দুটি ৭ দশমিক ৬৫  বোরের পিস্তল, ২১টি গুলি ও রান্না ঘরের তাক থেকে চারটি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুন্সীগঞ্জে শাহাজাহান বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানায়। আবদুর রহমান ঢাকা বিভাগের জেএমবির সামরিক কমান্ডার। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য গাজীপুর, ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জে অভিযান চালানো হয়।

লেখক ও প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবদুর রহমানকে নিয়ে গতকাল বুধবার রাতে অভিযানের সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। ছবি : এনটিভি

একপর্যায়ে আবদুর রহমান জানান, সিরাজদিখানের বালুরচর ইউনিয়নের খাসমহল এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ওই বাসায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে ফেরার পথে মোটরসাইকেলে করে আসা সহযোগীরা তাঁকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর গুলি বর্ষণ করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। তাঁদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় আবদুর রহমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। গোলাগুলি শেষে তাঁকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর আবদুর রহমানকে উদ্ধার করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এই সংঘর্ষে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বেলাল উদ্দিন, হাসান সাঞ্জারী ও মোশারফ হোসেন আহত হন। আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে একটি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, নয়টি গুলি, একটি লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি ডাকাতি মামলা আছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এদিকে শাহজাহান বাচ্চু হত্যার আসামি নিহতের ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী ও মামলার বাদী আফসানা বেগম। তিনি বলেন, জেএমবি এই হত্যায় জড়িত থাকার কারণে ঘৃণা প্রকাশ করছি। এ ছাড়া বাকি আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।