কালো পাট হবে সাদা, চাষ হবে নিড়ানি ছাড়া
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/09/08/photo-1441654430.jpg)
কালো পাট আর কালো থাকবে না, হয়ে যাবে ধবধবে সাদা। কালো পাট নিয়ে কৃষকের বিড়ম্বনা ঘোচাতে অবশেষে গবেষণায় মিলেছে সেই প্রযুক্তি। যার মাধ্যমে কালো পাটকে স্বল্প খরচে সাদা করতে পারবেন কৃষক। আর পাটচাষিদের নিড়ানির পেছনে শ্রম ও অর্থ ব্যয় থেকে রেহাই দিতে উদ্ভাবিত হয়েছে পাট চাষের নতুন কৌশল।
urgentPhoto
দুটি প্রযুক্তিরই উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের কিশোরগঞ্জ কেন্দ্রে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলম। তিনি জানিয়েছেন, এতে পাট চাষে কৃষকের খরচ যেমন কমে যাবে, তেমনি পাট সাদা হওয়ার কারণে এর বাজারমূল্য অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
আর আগামী বছরই কৃষকের মাঠে এই প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক।
সাদা পাটে বাড়বে লাভ
কালো পাটকে সাদা করার উপায় নিয়ে তিন বছর ধরে গবেষণা করেন বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম। তিনি জানান, ডোবা-নালার ময়লা পানিতে পাট ভেজানোর ফলে পাটের আঁশ কালচে রং ধারণ করে। পর্যাপ্ত খোলা পানির অভাবে কৃষকরা এ কাজ করতে বাধ্য হন। আর এ কারণে উপযুক্ত বাজারমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষকরা। এ বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তোলে বলে জানান আশরাফুল।
আশরাফুল জানিয়েছেন, দীর্ঘ গবেষণা চালিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছেন ‘টিএসপি ট্রিটমেন্ট প্রযুক্তি।’ তিনি বলেন, ‘এ প্রযুক্তিতে প্রতি লিটারে ছয় গ্রাম পরিমাণে টিএসপি মিশ্রিত পানিতে কালচে পাটকে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলেই সাদা পাটে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে এক মণ পাটকে সোনালি আঁশে পরিণত করতে ২৪০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োজন, যার বাজার মূল্য পড়বে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাত টাকা। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে মাত্র চার মিনিট।’ তিনি আরো জানান, পাট সাদা হওয়ার কারণে এর বাজার মূল্য বাড়বে, লাভবান হবেন কৃষকরা।
বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম জানান, সহজসাধ্য এ প্রক্রিয়ায় পাটের গুণ ও মান অক্ষুণ্ণ থাকবে শতভাগ। এতে মাত্র কয়েক টাকা খরচে প্রতি মণ পাটের মূল্য আগের তুলনায় বাড়তে পারে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। বর্তমানে দাপ্তরিকভাবে এ আবিষ্কারের মেধাস্বত্বের আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
কমবে চাষের খরচ
কালো পাটকে সাদা করার গবেষণায় সফলতার পর বিজ্ঞানী আশরাফুল আলম পাট চাষে খরচ কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি লক্ষ করে দেখেন প্রতি একর জমিতে শুধু নিড়ানি বাবদ কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। তাঁর গবেষণালব্ধ পদ্ধতিতে পুরো টাকাই সাশ্রয় করা সম্ভব।
আশরাফুল জানিয়েছেন, এ পদ্ধতিতে পাট চাষে সচরাচর যে পরিমাণ ইউরিয়া সার (৩০-৩৫ কেজি) ব্যবহৃত হয়, সেই ইউরিয়া সার টুকু পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে ও মাত্রায় প্রয়োগ করে জমির আগাছাকে দমন করে জৈব সারে পরিণত করে উর্বরতা শক্তি বাড়ানো সম্ভব। এতে নিড়ানি বাবদ শ্রম ও খরচ যেমন বেঁচে যাবে, তেমনি পাটের উৎপাদনও আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে আগাছা দমনে কোনো বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয় না বলে তা পরিবেশবান্ধব এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল।
আশরাফুল আলম জানান, নিড়ানি ছাড়া পাট চাষ করতে হলে তিন ধাপে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ কেজি, ছয় থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে ১৬ কেজি এবং সর্বশেষ ধাপে ছয় থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে ১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রতি বিঘা জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গত দুই মৌসুমে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়েছেন এবং চলতি মৌসুম শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন।
আশরাফুল আলমের এই উদ্ভাবনে নিজ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীরাও খুশি। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, ‘যদি পদ্ধতি দুটি মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে কৃষকরা পাট চাষ করে উপযুক্ত মূল্য পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।’
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের এ উদ্ভাবনের কথা জেনেছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আবিষ্কৃত দুটি প্রযুক্তি অতি দ্রুত সাধারণ কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই পাট গবেষণায় আরো অনেক অনেক যুগান্তকরী আবিষ্কার সম্ভব হবে।’