প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চায় তরিকুলের পরিবার

Looks like you've blocked notifications!

কোটা সংস্কার আন্দোলনে  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়েছে তাঁর পরিবার। প্রতিদিন তরিকুলের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা। তার কৃষক বাবার পক্ষে এতো টাকা ব্যয় করে চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই চিকিৎসার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার।

গতকাল শুক্রবার রাতে তরিকুলকে নগরীর রয়্যাল হাসপাতালে দেখতে গেলে এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ছোট বোন ফাতিমা খাতুন এসব কথা বলেন।

তরিকুলের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই খুবই শান্তশিষ্ট একজন মানুষ। সে কখনো কারো সাথে ঝামেলায় জড়ায়নি। কোনো ধরনের রাজনীতির সাথেও জড়িত নয়। অনেক কষ্টে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। তাকে যেভাবে মারধর করা হয়েছে তার সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। একটু নড়াচড়া করলেই সে কাতরে উঠছে। ভাইয়ের কষ্ট দেখে আমার কান্না পাচ্ছে।’

চিকিৎসার বিষয়ে ফাতেমা বলেন, ‘তরিকুলের সহপাঠী, বড় ভাই, পরিচিতজনদের সহায়তায় তার চিকিৎসা চলছে। তরিকুলের সহপাঠীরা অর্থ সংগ্রহ করে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছে। তাকে দিনে দুটি ইঞ্জেকশন দিতে হয় যার প্রতিটির দাম ১৫০০ টাকা। হাসপাতালের সিট ভাড়া, ডাক্তারের ফি, ওষুধপথ্য সবমিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘তরিকুলের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যয়ভার কিভাবে বহন করবো তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। আমার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব নয়। আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার ভাইয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতের মুখে। তরিকুলকে বাঁচাতে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা চাই।’

হাসপাতলে তরিকুলের সঙ্গে থাকা সহপাঠীরা জানান, রয়্যাল হাসপাতালের চিকিৎসক তরিকুলকে দেখার পর কিছু পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই ডাক্তারকে দেখানো হবে। এ ছাড়া তরিকুলের মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। যদি মেরুদণ্ডে হার ভেঙে যায় তাহলে এটা দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন।

তরিকুলের চিকিৎসার তত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবু বলেন, ‘হাতুড়ি পেটায় তরিকুলের ভেঙে যাওয়া ডান পা জোড়া লাগতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তরিকুলের এক্স-রেসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন রিপোর্ট এলে হাসপাতলে কতদিন থাকতে হবে কিংবা অস্ত্রোপাচার করা লাগবে কিনা তা জানা যাবে।’

গত ২ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের মধ্যে তরিকুলকে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। আঘাতে তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়। এছাড়া মাথায় গুরুতর জখম হয়। পরে পুলিশ উদ্ধার করে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার তরিকুলকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে  সহপাঠীরা তাঁকে নগরীর রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন।