শাহজাদপুরে ১৩ ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি

Looks like you've blocked notifications!

যমুনা নদীর ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় শাহজাদপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের মানুষের সরাসরি সড়ক পথে যাতায়াত করতে পারছে না। বিকল্প হিসাবে এখন একমাত্র ভরসা নৌকা।

এরই মধ্যে শাহজাদপুর উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে নির্মাণাধীন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়গামী নতুন সড়কটি। উপজেলার রামকান্তপুর মৌজার বাথান এলাকার সিসি ব্লক দিয়ে নির্মাণাধীন প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কটি বন্যার পানির চাপে ভেঙে গেছে।

পানি বৃদ্ধিতে গ্রামের মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাবে কৃষকরা তাদের গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। ফলে বাজারে গো-খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুযোগ নিচ্ছে খইল, ভুষি গো-খাদ্য প্যাকেট বিক্রেতারা। বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে উপজেলার গো-খামার মালিক ও কৃষকেরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে।

ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। আর এই পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উপজেলার এ সব গ্রামে এ ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গত ১ সপ্তাহে ভাটপাড়া এলাকার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৫টি স্থানের অন্তত ১ হাজার ফুট এলাকার সিসি ব্লক ও জিও টেক্সপেপার নদীগর্ভে ধসে গিয়ে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছরের ভাঙ্গন এলাকা মেরামত না করায় এবং এ বছর এখনো ভাঙ্গনরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই ভাঙ্গন আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে।

যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি, সোনাতুনি, খুকনি ও জালালপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৭টি গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন কবলিত উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের ভাটপাড়া, গুদিবাড়ি, জগতলা, ঠুটিয়া ও হাটপাচিল, জালালপুর ইউনিয়নের পাকুরতলা, ভেকা, বাঐখোলা, খুকনি ইউনিয়নের আরকান্দি ও ব্রাহ্মণগ্রাম, সোনাতুনি ইউনিয়নের ধীতপুর, শ্রীপুর, মাকড়া, সোনাতুনি, বড় চানতারা, বারপাখিয়া ও বানতিয়ার। এরই মধ্যে এ সব গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মসজিদ, ৫০০ বিঘা আবাদি জমি ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এলাকাবাসির মধ্যে চরম ভাঙ্গন আতংক বিরাজ  মধ্যে করছে।

ভাঙন কবলিত আলমাস হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গনের চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। ৮ বার বাড়ি ভেঙেছে। প্রতিবারই সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আবারও যদি বাড়িঘর যমুনার পেটে চলে যায়, তবে আর ঘুরে দাড়াতে পারব না।’

ভাঙন কবলিত আফসার আলী বলেন, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন প্রকার কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা এবারও ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। এখনো এ ভাঙ্গনরোধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

পোতাজিয়া ইউনিয়নের মেম্বার নজরুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে শাহজাদপুর থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়েরম মধ্যে নির্মাণাধীন সংযোগ সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা জলে চলে গেছে। এছাড়া উপজেলার পোতাজিয়া, কায়েমপুর, গাড়াদহ ও রূপবাটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুসাইন খান বলেন, ভাঙন এলাকার আশপাশে ফাঁকা কোনো স্থান না থাকায় নদী ভাঙনের শিকার এসব মানুষকে দূর-দূরান্তে গিয়ে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। তারপরও এসব মানুষের তালিকা তৈরি করে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এনায়েতপুরের ভাঙন কবলিতদের অবস্থা বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই সাড়ে ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

ইউএনও আরো বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জি আর বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করা যাচ্ছে কয়েক দিনের মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, টাকার সংকুলান না থাকায় আপাতত বাঁধ রক্ষায় কাজ করা যাচ্ছেনা। তবে ভাঙ্গনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।