কয়লা গায়েব, মামলা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!
আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ছবি : এনটিভি

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানি লিমিটেড থেকে কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাংলাদেশ তৈল ও গ্যাস করপোরেশনকে (পেট্রোবাংলা) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ তথ্য জানান।

নসরুল হামিদ জানান, কয়লা গায়েবের ঘটনায় আলোচনা করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজ জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া পুরো বিষয়ে পেট্রোবাংলার তদারকিতে ঘাটতি ছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন।

নসরুল হামিদ বলেন, ‘ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করার জন্য। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে এবং সেখানে একটা মামলা রুজু করার কথা বলা হয়েছে পেট্রোবাংলাকে। এমনিতেও আমাদের হাতে কালকের মধ্যে আমাদের তদন্ত রিপোর্ট চলে আসবে,  কী হয়েছে ওই বিষয়টা জানার জন্য।’ যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কিছুদিন আগে এক  লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে খনির ইয়ার্ডে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা থাকে। অর্থাৎ এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রোবাংলাকে জানায়। তখনই কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে। কয়লা সংকটের কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে চালু থাকা একটি ইউনিটের কাজও বন্ধ হয়ে যায়।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কিছুদিন আগেও এই কেন্দ্র থেকে ৩৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতো। কিন্তু কয়লা সংকটের কারণে কমতে থাকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর একে একে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিটই। এর ফলে উত্তরের চার জেলায় অন্তত মাস খানেক বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ।

পিডিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘কালকে আমার সিরাজগঞ্জে দুইটা মেশিন চলেছে। এরপরে সিক্সটি থ্রি মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগামী ২৭ তারিখে আশা করছি, তিনটা মেশিন আসবে। তখন হয়তো আমরা আর একটু লোড পাবো। আরেকটু কমফোর্টেবল অবস্থায় থাকব। হয়তো কিছুটা লোডশেডিং হবে, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নাই।’

কয়লা গায়েবের ঘটনায় এরই মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপমহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।