বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারায় মামলা না করতে নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!

বিলুপ্ত হওয়া ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ (২) ধারায় মামলা না করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অস্তিত্বহীন আইন দিয়ে যেন জনগণকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি না করা হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেন আদালত।

আজ সোমবার এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় জামিন শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ আইনটি যেহেতু বাতিল, এ আইনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সেহেতু এ আইনের মামলা নেওয়া বেআইনি। 

আইনের বিষয়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ (১) বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করতে পারবে না। আর ১৬ (২) ধারায় বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি ক্ষতিকর কোনো কাজ করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারা ২৭ বছর আগেই বাতিল হয়েছে। কিন্তু ‘ভুলবশত’ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনও ওই ধারায় মামলা করা হচ্ছে। তাই আদালত ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬ ধারায় মামলা না করতে স্বপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইউসুফ মাহমুদ বলেন, বিলুপ্ত ১৬ ধারায় অপরাধ সংগঠনের আগে গোপন সলাপরামর্শ, ষড়যন্ত্রের মতো বিষয়ের কথা বলা ছিল। বিলুপ্ত ওই ধারায় মামলা হলে অপরাধ করেও অনেক অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে। আবার অপরাধ না করেও অনেককে কারাগারে কাটাতে হচ্ছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পরে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ একটি অধ্যাদেশ দিয়ে চুয়াত্তরের আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল করেন, যা বিএনপি ১৯৯১ সালে সংসদে পাস করেছিল। এরপর ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে ‘ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক’ (প্রধানত সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী) কাজ থেকে বিরত রাখতে ১৬ ধারাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এই অধ্যাদেশসহ ১২২টি অধ্যাদেশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে পেশ করা হয়, কিন্তু তা পাস হয়নি। ফলে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ ধারা বাতিল অবস্থায় থেকে যায়। 

২০১৬ সালের ডিসেম্বর আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের একটি অংশ ১৫ হাজার টাকার ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এ সময় তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ৫৫টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। কিছুদিন পরে ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘অপরাধ সংঘটনের চক্রান্তের’ অভিযোগ এনে আশুলিয়ার পুলিশ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিলুপ্ত ১৬ (২) ধারায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

ওই ঘটনায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সেই সময়ের দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন তাদের অঙ্গসংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থানার সাধারণ সম্পাদক আহমেদ জীবনকে গ্রেপ্তারের বৈধতা চালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ জানুয়ারি বিচারপতি সৈয়দ রিফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করেন। পুলিশের গ্রেপ্তারের আদেশকে কেন আইনি এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।