এখন শুধু গায়েবের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে : রিজভী
দেশে এখন গায়েবি শাসন চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেছেন, চারদিকে এখন শুধু গায়েবের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এ দেশে মানুষ গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব হয়, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের লাখ লাখ কোটি টাকা গায়েব হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট থেকে সোনা গায়েব হয়, সোনা গায়েব হয়ে মিশ্র ধাতুতে পরিণত হয়, শেয়ার বাজারের টাকা গায়েব হয়, এখন অমূল্য সম্পদ দেশের খনি থেকে লাখ লাখ টন কয়লাও গায়েব হয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, টাকা, স্বর্ণ, কয়লা গায়েব নিয়ে এত আলোড়ন তৈরি হলেও সরকার তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে। এই লাখ লাখ টন কয়লা গায়েবের দায় তিনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশ হলে প্রধানমন্ত্রী এত বড় কেলেঙ্কারির দায়ে পদত্যাগ করতেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাকে যক্ষের ধনের মতো ভালোবাসেন, তাই তিনি সব বিসর্জন দেবেন, কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বেন না।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ এখন শুধু তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, এখন গোটা ঝুড়িই গায়েব হতে বসেছে। এই সমস্ত ন্যক্কারজনক মেগা দুর্নীতির ঘটনাসমূহে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইলেও ক্ষমতাসীনদের মনে মৌসুমী হাওয়া বয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, এইচ টি ইমাম বলেছেন, গাজীপুর ও খুলনাতে গুড, তিন সিটিতে বেটার নির্বাচন হবে। পুলিশী গ্রেপ্তারি অভিযানের মধ্যে ভোট জালিয়াতির মহোৎসবে খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচন তাদের দৃষ্টিতে যদি গুড হয়ে থাকে তাহলে আগামী তিনটি সিটি করপোরেশনের বেটার নির্বাচনের চেহারাটা কী হবে তা নিয়ে দেশবাসী আতঙ্কবোধ করছে।
রিজভী বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা ইত্যাদিকেই আওয়ামী নেতারা গুড সংস্কৃতি হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো দৃষ্টান্ত নেই। আগামী তিন সিটির নির্বাচনে এখনই ক্ষমতাসীনদের দাপট ও দৌরাত্ম্য যে বিভৎস রূপ নিয়েছে তাতে এইচ টি ইমাম সাহেবের আগামী তিন সিটির বেটার নির্বাচনের আভাস পাওয়া যায়।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারাও নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচন কমিশন নিজেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে গ্রেপ্তার, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধাসহ নানা বিষয়ে অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও গতকাল ইসি সচিব বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অথচ কমিশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল, তিন সিটি নির্বাচনে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যাবে না। ইসি সচিবের এই বক্তব্য পক্ষপাতমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাবেক ভিপি রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। রাজশাহীতে সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিএনপির গণসংযোগ ও পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং নারী কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এ নিয়ে রাজশাহী নির্বাচন কমিশন অফিসে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আওয়ামী লীগের কোনো ভোট নেই। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সন্ত্রাসের ওপর তারা নির্ভর করেছে।