সেই ক্লিনিকে আরো এক প্রসূতির মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!

ঝিনাইদহের মহেশপুরের আরো একজন প্রসূতি মারা গেছেন। জেসমিন খাতুন (২২) নামে ওই নারী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত মাসে মহেশপুরের ভৈরবা বাজারের জননী ক্লিনিকে জেসমিনের অস্ত্রোপচার হয়। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজ শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান।

এর আগে জননী ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গত আগস্ট মাসসহ ৪০ দিনে পাঁচজন প্রসূতি মারা যায়। জেসমিনসহ এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়ে। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জননী ক্লিনিক।

জেসমিন মহেশপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেসমিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার ভোরে জেসমিন মারা যান।

জেসমিনের চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, গত ২১ আগস্ট জননী ক্লিনিকে জেসমিনের অস্ত্রোপচার হয়। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে যান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেসমিনকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে জেসমিন বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু গত বুধবার পরিস্থিতির অবনতি হলে জেসমিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৯টার দিকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে জেসমিনকে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।  

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জননী ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে গত আগস্ট মাসে কমপক্ষে ১৫ জন প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার করার সাতদিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে তাঁরা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রসূতিরা প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও জ্বরে আক্রান্ত হন এবং বমি করতে থাকেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এদের খুলনা, ঢাকা, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন  ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

জননী ক্লিনিকে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন জীবনগর উপজেলার জাগুসা গ্রামের রূপা খাতুন (২০), মহেশপুর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আরিফা খাতুন (১৮), জীবননগর উপজেলার বারান্দি গ্রামের ছালেহা খাতুন (২৬), মহেশপুর উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্র গ্রামের বীথি খাতুন (১৮), পাঁচপোতা গ্রামের খায়রুন নেছা (২০)।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বলেন, ‘জেলার হাটে বাজারে অলিগলিতে গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা প্রায় ১১৪টি। এর মধ্যে ৭৬টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। গোটা জেলায় পাঁচ-ছয়টি নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। বাকিগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও ডিপ্লোমা নার্স নেই। অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে বেশির ভাগ ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতাল।’

সিভিল সার্জন আরো বলেন, বিপজ্জনকভাবে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতাল ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করেন ও রোগী দেখেন। জননী ক্লিনিক মালিক মো. মোমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সুপারিশসহ পত্র পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

জননী ক্লিনিকের মালিক মোমিনুর রহমান, চিকিৎসক গোলাম রহমান ও সহি উদ্দিনসহ অজ্ঞাতনামা আরো পাঁচজনকে আসামি করে গত ২ সেপ্টেম্বর মহেশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন শুক্রবার মারা যাওয়া জেসমিনের চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) খবির উদ্দিন জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের সময় জেসমিন জীবিত ছিলেন। মারা যাওয়ায় মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে। তিনি আরো জানান, মামলার আসামিরা এখনো পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে।

এদিকে বাদী আলাউদ্দিন দাবি করেছেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিরা নানাভাবে তাঁকে হুমকি দিচ্ছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন আবদুস সালামের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্তদল জানান, জননী ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মস্তিষ্কের সংক্রমণে চার প্রসূতি মারা যান। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত প্রতিবেদন ওই দিনই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। তদন্ত দলে অপর দুই সদস্য হলেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক (গাইনি) ইমদাদুল হক ও অস্ত্রোপচারবিষয়ক পরামর্শক জাহিদুর রহমান। এ কমিটির সঙ্গে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান কাজ করেন।