ভৈরবে গবাদিপশু পালনকে উৎসাহিত করতে এনএটিপির সহায়তা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গবাদিপশু পালন করে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে নয় শতাধিক খামারির মধ্যে বিভিন্ন উপকরণসহ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২ (এনএটিপি-২)-এর আওতায় এসব বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর আগে গবাদিপশু পালনে খামারিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভৈরব উপজেলার একটি পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য বাজার মূল্য প্রাপ্তিতে ছাগল পালনে ২৪টি, গাভী পালনে ১২টি, গরু মোটাতাজাকরণে ছয়টিসহ মোট ৪২টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা ২০ জন করে।
গঠিত সমিতিগুলোর খামারিরা সমবায় ভিত্তিতে নিজেদের সঞ্চিত টাকায় তিন হাজারেরও বেশি ছাগলসহ প্রায় পাঁচ হাজার গবাদি পশু পালন করছেন। আর এই প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এইসব সমিতি এবং প্রাণিসম্পদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান বলেও জানায় সূত্র।
ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানজিলা ইভা জানান, গঠিত সমিতির সদস্যদের নিয়ে প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে উঠান বৈঠক করে থাকেন তিনি। এ ছাড়াও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম এবং ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান পালাক্রমে ওই সব সমিতি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
ভৈরবের গ্রামীণ অর্থনীতি প্রাণিসম্পদ নির্ভর। প্রাণিসম্পদকে এই অঞ্চলের জন্য লিভিংব্যাংক উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম জানান, প্রাণিসম্পদ পালনে উৎসাহিত করতে এ অঞ্চলের খামারিদের এনএটিপি ২-এর আওতায় চৌকি, মাচা তৈরির উপকরণ, বেলচা, কোদাল, বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য, চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা পাকঞ্চন ঘাসের কাটিং বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ ছাড়া গবাদিপশু পালনে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা এবং পশু রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এনএটিপির সহায়তা এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এই অঞ্চলের প্রাণিসম্পদের দ্রুত বর্ধন এবং জড়িত খামারিদের দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে বলে দাবি করেন ডা. কামরুল ইসলাম।
এদিকে সুবিধাভোগী খামারিদের মধ্যে ভৈরবের শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর এলাকার খামারি হুসনা বেগম জানান, তিনি ২০ সদস্যের একটি সমিতির সদস্য। তিনি বর্তমানে ৯টি ছাগল লালনপালন করছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে তিনি প্রয়োজনীয় সব সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানান। তিনি তাঁর এই উন্নতির জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানজিলা ইভা, ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ কামরুল ইসলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
একই মতামত জানান শিমুলকান্দি ইউনিয়নের পাঁচঘর হাটির গরুর খামারি নাছির মিয়া ও দাসপাড়ার ছাগল পালনের খামারি আবেদা বেগম।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় চত্বরে শিমুলকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন খামারিদের মধ্যে গবাদি পশু রাখার জন্য কাঠের তৈরি চৌকি, মল-মূত্র পরিষ্কারের জন্য লোহার বেলচা, পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী, ভিটামিন ওষুধ ও ৩০০ টাকা করে নগদ বিতরণ করা হয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম খামারিদের মধ্যে এইসব সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তানজিলা ইভাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।