চারদিকে শুধু বন্যার ক্ষতচিহ্ন
কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তিন সপ্তাহের অধিক সময় ধরে স্থায়ী এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমন ক্ষেতের। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবারের বন্যায় জেলার ৩৬ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যদিও কৃষকরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে পানি, কোনো ফসল নেই। যেদিকে চোখ যায় শুধুই বন্যার ক্ষতচিহ্ন। কৃষকরা জানান, এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার কোনো রাস্তা দেখছেন না তাঁরা। এ অবস্থায় ক্ষতির শিকার আড়াই লাখ কৃষক তাকিয়ে আছেন সরকারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার দিকে। তাঁরা আশা করেন, সরকার তাঁদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেবে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় এক লাখ দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করেন কৃষকরা। টানা তিন সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় ৫৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ হাজার হেক্টর ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে প্রায় আড়াই লাখেরও বেশি কৃষক। শুধুমাত্র কৃষির ওপর নির্ভরশীল এ মানুষগুলোর সামনে এখন শুধুই অন্ধকার। আমনের চারা রোপণের সময় শেষ হয়ে গেলেও পতিত জমিতে নতুন করে চারা লাগানোর কথা ভাবছেন কৃষকরা। কিন্তু চারা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার মণ্ডলের হাট ইউনিয়নের কৃষক আবেদ আলী জানান, ‘আমার পাঁচ একর জমির ধান একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। যা সম্বল ছিল সব আবাদের পেছনে খরচ করেছি। এখন আর কোনো উপায় নাই। কী হবে আল্লাহ্ ভালো জানেন।’
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের বালাকান্দি গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, ‘আমরা কৃষক। কৃষিকাজ করেই আমাদের জীবন চলে। কিন্তু এবারের বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। এখন আর চারা লাগানোর সময় নাই। তারপরও চারা লাগাতে চাই। কিন্তু চারা পাওয়া যাচ্ছে না। সামনে কী খাব, ছেলেমেয়ে কীভাবে বাঁচাব ভেবে পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে সহায়তা চাই।’
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের কৃষক ওবাইদুল জানান, ‘টানা ২২-২৩ দিন ধরে ধানক্ষেত পানির নিচে থাকায় পচে গেছে। অথচ কৃষি বিভাগের কেউ এসে কোনো পরামর্শ দেয় নাই। এখন কী আবাদ করব তাও ভেবে পাচ্ছি না।’
কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মাঠে কৃষি বিভাগের কোনো তৎপরতা না থাকার কথা অস্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জানান, ‘আমরা কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং সে মোতাবেক কাজ করছি। গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।