বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে দুদক পরিচালক

‘সিসি টিভি ফুটেজ পাওয়া সম্ভব না’

Looks like you've blocked notifications!
আজ সোমবার দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পরিদর্শন করে দুদকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। ছবি : এনটিভি

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পরিদর্শন করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক কাজী শফিকুল আলম। আজ সোমবার দুদকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল কয়লা খনি পরিদর্শনে যায়।

পরিদর্শন শেষে কাজী শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা কিছু কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করেছেন। কাগজপত্রগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খনি এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দুদক পরিচালক জানান, এটা এখন আর সম্ভব নয়। কেননা, ফুটেজ ২১ দিন পর্যন্ত থাকে। আর এরই মধ্যে ২১ দিন পার হয়ে গেছে।

কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা ছয়জন তদন্তের জন্য এসেছিলাম। আমরা এখানে এসে কিছু কাগজপত্র জব্দ করেছি। সেই কাগজপত্র বিচার বিশ্লেষণ করব। বিচার বিশ্লেষণের পরে আমরা খুব দ্রুততার সাথে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেব। আসলে আমরা এখনো এটা যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছি। আর আমরা এই মাত্র সিজ করেছি। ঢাকায় যাব আমরা। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে, তারপরে আমরা কমিশন বরাবর প্রতিবেদন জমা দেব। কমিশন সেটা এক্সেপ্ট করলে, আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সিসিটিভি ফুটেজের কথা আমরা বলেছি। ফুটেজ ২১ দিন পর্যন্ত থাকে। যেহেতু ২১ দিন পার হয়ে গেছে তাই সম্ভব হচ্ছে না। তবে, আনুষঙ্গিক যে সমস্ত ডকুমেন্টস আছে, তাতেই মনে হয় আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারব এবং প্রতিবেদনে হয়তো সেটা প্রতিফলিত হবে। কমিশন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।’

দুদক পরিচালক বলেন, ‘আমরা তদন্ত করব। সরেজমিন তদন্তের কাজ করেছি। স্পটে আমরা গিয়েছি যে কীভাবে প্রসেসিংটা হয়, কীভাবে প্রোডাকশনটা হয়। কোথাও কোথাও গ্যাপ আছে কি না, পাশাপাশি আমাদের কয়লার যে ইয়ার্ড আছে, সেই ইয়ার্ডে আমরা গিয়েছি। এখানে মোটামুটি আমরা সবাইকে আসলে ইন্টারোগেশন (জিজ্ঞাসাবাদ) করি নাই। ইন্টারোগেশনের জন্য আমরা চিঠি দেব। সেই চিঠির ভিত্তিতে আমরা দুদকে তাদের সাথে কথা বলব।’

এই তদন্ত কারো মাধ্যমে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী শফিকুল আলম বলেন, ‘অলরেডি যারা নাকি মামলার আসামি ছিলেন, তাদের আমরা বিমানবন্দর থেকে ব্লক করে দিয়েছি। তাঁরা যেন বিদেশ না যেতে পারে এবং আমার মনে হয় না তদন্ত ব্যহত হবে।’

এই তদন্ত দলের সঙ্গে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক সামসুল আলম। তাঁরা আরো দুই একদিন কয়লা খনিতে অবস্থান করবেন বলে জানা যায়।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্র জানায়, জুলাই মাসের শুরুতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ইয়ার্ডে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা থাকার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচ-ছয় হাজার টন কয়লা থাকে। অর্থাৎ এক লাখ ৪২ হাজার টন কয়লার হদিস নেই। কয়লার অভাবে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে বিষয়টি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পেট্রবাংলাকে জানায়। তখনই কয়লা উধাও হওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে। কয়লা সংকটের কারণে এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।

এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গত ২৪ জুলাই পার্বতীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় খনির সদ্য অপসারিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিবউদ্দীন আহম্মদ, কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়াসহ ১৯ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।

অপরদিকে মামলার নথি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর আঞ্চলিক শাখা থেকে কেন্দ্রীয় দুদকের কর্যালয়ে পাঠানো হয়। ৫২৫ মেগাওয়াট সম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় রংপুর বিভাগের আটটি জেলার বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ও শিল্পকারখানা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।