তাড়া খেয়ে মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ পুলিশের মারধরে
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় পুলিশের তাড়া খেয়ে সোহেল ভুইয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত সোহেল ভুইয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদী মধ্যপাড়া ভুইয়া বাড়ির আবদুল লতিফ ভুইয়ার ছেলে।
ঘটনাটি ঘটে আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মানিকদী পূর্বকান্দা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থান এলাকায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রামের মানিকদী পূর্বকান্দা ঈদগাহ সংলগ্ন কবরস্থান এলাকায় একটি দল বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত জুয়ার আসর বসিয়ে জুয়া খেলে আসছে। স্থানীয় লোকজনের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আজ দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার গোলাপ ভৈরব থানাকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অভিজিৎ চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা আজ বিকেলে সেখানে অভিযানে যায়।
পুলিশের অভিযান টের পেয়ে জুয়ারিরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় পালাতে গিয়ে সোহেল ভুইয়া হোচট খেয়ে গর্তে পড়ে গেলে পুলিশ তাঁকে আটক করতে সক্ষম হয়। সোহেল নিজেকে হার্টের রোগী এবং জুয়া খেলেনি বলে দাবি করলে পুলিশ স্থানীয় চৌকিদার আরফানের মাধ্যমে বাড়ি পৌঁছে দেয়। বাড়িতে পৌঁছার কিছুক্ষণ পর সোহেল মারা যান।
এদিকে সোহেলের মৃত্যুর পর পুলিশের মারধরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তাদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁকে আটকের পর লাঠি দিয়ে বেদম পেটায়। এতে তিনি আহত হলে অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় চৌকিদারকে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশের মারধরে সোহেলের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তাঁর চাচাতো ভাই জনি ভুইয়া জানান, সোহেল মাদক গ্রহণ করলেও জুয়া খেলত না। জুয়া খেলার মতো আর্থিক সামর্থ্যও তাঁর ছিল না। দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের বাবা সোহেলের সংসার চলত কর্মজীবী স্ত্রীর উপার্জনে।
এক প্রশ্নের উত্তরে জনি জানান, সোহেলের হার্টের কোনো সমস্যা ছিল না।
সোহেলকে মারধরের কথা অস্বীকার করে এসআই অভিজিৎ চৌধুরী ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ফজলুল হক জানান, ঘটনার সময় গ্রামের শত শত লোক উপস্থিত ছিল। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তারা বিষয়টি অবশ্যই প্রত্যক্ষ করতেন।
দুই পুলিশ সদস্য জানান, পালাতে গিয়ে একটি লোক গর্তে পড়ে গেছে-এমন খবরে আমরা গিয়ে সোহেলকে আটক করি। পরে তিনি হৃদরোগী, এ তথ্য জেনে তাঁকে আমরা ছেড়ে দেই এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দিতে স্থানীয় চৌকিদারকে দায়িত্ব দিয়ে আসি।
গজারিয়া ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার গোলাপ জানান, স্থানীয় একটি কুচক্রী মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর ইউনিয়নে এই জুয়ার আসরটি চলে আসছে বেশ কিছুদিন ধরে। তাঁর অনুরোধে পুলিশ আজ অভিযান চালালে মাদকাসক্ত ওই যুবক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়ে ভৈরব থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এসআই মো. শ্যামল মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোহেলের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ থানায় নিয়ে যায়। ওই সময় ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর ইউপির কয়েকজন সদস্যসহ গ্রামের বেশ কিছু গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করে গোলাম সারোয়ার জানান, সোহেলের গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন তাঁরা দেখতে পাননি।
জানতে চাইলে সোহেলের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিকারী এসআই মো. শ্যামল মিয়া জানান, চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মরদেহ উল্টেপাল্টে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ থানায় নিয়ে এসেছি। আগামীকাল বুধবার মরদেহ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান জানান, এলাকার চেয়ারম্যানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠালে জুয়াড়িরা পুলিশ দেখে দৌড়ে পালানোর সময় ওই যুবক গর্তে পড়ে যায়। এ সময় গ্রাম পুলিশের সদস্যরা তাঁকে গর্ত থেকে তুলে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পরে তাঁর মৃত্যু খবরে পুলিশ রাতে তাঁর বাড়ি যায় এবং প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসে।