১১ বছর পর কিবরিয়া হত্যার বিচার শুরু

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও পলাতক আসামি আবুল হারিছ চৌধুরীসহ ৩২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হলো। মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ রোববার সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসানের আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এখন আলোচিত এই মামলার বিচারকাজ শুরু হবে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১১ বছরের বিচার শুরুর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো বলে মনে করছে কিবরিয়ার পরিবার।
রোববার এই মামলায় কারাগারে থাকা ১৪ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বেলা ১১টায় শুরু হয় শুনানি। দীর্ঘ শুনানি শেষে বেলা ২টায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকার পক্ষের আইনজীবী মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ জানিয়েছেন, কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন এরই মধ্যে নয়বার পিছিয়েছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর ছিল কিবরিয়া হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের সর্বশেষ তারিখ। তবে আসামি কারাবন্দী সিলেট সিটি করপোরেশনেরবরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অসুস্থ থাকায় এবং তাঁকে আদালতে হাজির না করায় ওই দিন অভিযোগ গঠন হয়নি। সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মকবুল আহসান আজ ১৩ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। একই সঙ্গে আদালত ওই তারিখে কারাবদি সিলেট সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত হওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ৬ সেপ্টেম্বর কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গৌছ, হুজি সদস্য মিজানুর রহমান মিন্টু, হাফেজ মো. নাঈম, বদরুল আলম মিজান ও রিপনসহ ১৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। তবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় আরিফুল হক চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অন্যদিকে বরাখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁকে নিয়ে আসা হয়।
এর আগে গত ২১ জুন, ৬, ১৪ ও ২৩ জুলাই এবং ৩, ১০, ১৮, ২৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর আলোচিত এই হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সব আসামি আদালতে হাজির করতে না পারায় অভিযোগ গঠনের তারিখ পিছিয়ে যায়। আজ সব আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করা হলো।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। হামলায় নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। এ ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলার ৩২ আসামির মধ্যে-১৪ জন কারাগারে, ৮ জন জামিনে এবং ১০ জন পলাতক রয়েছেন। এদিকে অভিযোগ গঠনের শুরুতে আরিফুল হক চৌধুরী, জিকে গৌছ, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ হাজতি ১৪ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান তাঁদের আইনজীবীরা। আরিফের পক্ষে অব্যাহতির শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী মো. লালা। তবে আদালত অব্যাহতির সকল আবেদন নামঞ্জুর করে বেলা ২টায় অভিযোগ গঠন করেন।