নওগাঁর পশুর হাটে অতিরিক্ত ‘খাজনা’ আদায়ের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!

নওগাঁর অধিকাংশ পশুর হাটেই ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশু কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত ‘খাজনা’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়ম থাকলেও নওগাঁর কোনো পশুর হাটেই টানানো হয়নি সরকার নির্ধারিত টোল তালিকা। ফলে পশু কিনতে আসা ক্রেতারা অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গবাদি পশুসহ ১২৫ ধরনের দ্রব্য কেনাবেচার জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু-মহিষে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল-ভেড়ার জন্য ৭৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। গবাদি পশুর ক্ষেত্রে শুধু ক্রেতা টোল দেবেন।

নওগাঁয় ছোট-বড় ১০৮টি হাটবাজার রয়েছে। স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে ৩৮টি। এর মধ্যে নওগাঁ সদরের ত্রিমোহনী, মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া, সুতিহাট, নিয়ামতপুরের ছাতড়া হাট, মহাদেবপুরের মাতাজী, বদলগাছীর কোলা, আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ, পত্নীতলার মধইল, ধামইরহাটের ইসবপুর, আগ্রাদ্বিগুণ, রানীনগরের আবাদপুকুর, সাপাহারের উমইল, পোরশার গাংগুরিয়া ও মর্শিদপুর পশু কেনাবেচার বড় হাট।

গত কয়েক দিন এসব হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোনো হাটেই টানানো হয়নি সরকার নির্ধারিত খাজনার তালিকা। পশু কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি খাজনা আদায় করা হচ্ছে। খাজনা ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ আদায়েরও অভিযোগ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। শুধু ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ইজারাদারের লোকজন বিক্রেতাদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করছিলেন।

নওগাঁর সবচেয়ে বড় পশুর হাট মান্দার চৌবাড়িয়া হাট। এই বছর হাটটি দুই কোটি ৪০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার চৌবাড়িয়া হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন তহবিলের কথা বলে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। গরু-মহিষের জন্য ৩৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হলেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ছাগল-ভেড়ার জন্য ৭৫ টাকা টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও শতকরা ১০ টাকা হারে টোল আদায় করা হচ্ছে। পশু বিক্রেতাদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা করে। আর রসিদ লেখার জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে খাজনার রসিদে টাকার পরিমাণ লেখা হচ্ছে না।

হাট থেকে খাসি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলার আবদুল জব্বার। জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,  ‘সাত হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছি। এর জন্য শতকরা ১০ টাকা হিসেবে ৭০০ টাকা খাজনা দিতে হলো। আবার খাজনার রসিদে ভ্যাট ও খাজনা ঘরে কোনো টাকার পরিমাণ লেখা হয়নি। হাটের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ঈদ সেলামির নাম করে আরো ৪০ টাকা নিল। এ রকম অরাজকতা কোনো হাটে দেখিনি।’

অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে ওই হাটের ইজারাদার এমদাদুল হক মোল্লা বলেন, ‘এই হাটের ডাক অনেক বেশি। দরপত্রে প্রশাসন টোল আদায়ের যে পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী টোল আদায় করলে লোকসান গুনতে হবে। পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর টোলের পরিমাণ একটু বাড়ানো হয়েছে।’ টোলের তালিকা টানানোর ব্যাপারে তিনি জানান, সাইনবোর্ড বানাতে দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই সেগুলো হাটে টানিয়ে দেওয়া হবে।

গত সোমবার ছাতড়া হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম বলেন, ‘৩২ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। এর জন্য ৪৫০ টাকা দিতে হলো। আবার রসিদ লেখার জন্য ৫০ টাকা নিল।’

অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাতড়া হাটের ইজারাদার রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘এই হাট এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ডেকে নিয়েছি। সারা বছর টোল আদায়ের যে অবস্থা পুরো টাকা উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি। তার পরও বেশি খাজনা নেওয়া হচ্ছে না।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ‘জেলার ১১টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) হাটবাজারগুলোতে টোল আদায়ের তালিকা টানিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সার্বক্ষণিক তদারকি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইজারাদাররা অবৈধভাবে টোল আদায় করলে প্রয়োজনে হাট বাতিল করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।’