একজনের জুট মিলে সার মজুদ, ভাড়া নিচ্ছেন অন্য কেউ

Looks like you've blocked notifications!
জুট মিলের বাগানে সার রাখা হয়েছে। ছবি : এনটিভি

ব্যক্তিমালিকানাধীন এ্যাজাক্স জুট মিলের গুদামসহ খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আমদানি করা সার। বিএডিসি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আর জুট মিলে রাখা সারের গুদাম ভাড়া তুলছেন খানজাহান আলী থানা যুবলীগ সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। বিষয়টি তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন।

এ্যাজাক্স জুট মিলের মালিক দাবিদার সাবলি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, ‘বোঝেন তো লিংকন স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোক, তাই কিছু বলা যায় না।’

এদিক যুবলীগ নেতা লিংকন বলেন, ‘মান্নান সাহেবের সঙ্গে একটা সমঝোতা করে নেব।’

বিএডিসির খুলনার যুগ্ম পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, আসন্ন আমন মৌসুম এবং নির্বাচন সামনে রেখে যাতে কোনো সারের সংকট না দেখা যায়, সে জন্য ৬০ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করা সার খুলনায় এসেছে। খুলনায় সব গুদাম ও মিলে ধারণক্ষমতা মাত্র ১৩ হাজার মেট্রিক টনের। ফলে বাকি ৪৭ হাজার টন সারই খোলা আকাশের নিচে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিএডিসি কর্মকর্তা আরো বলেন, একই প্রক্রিয়াই মীরেরডাঙ্গায় এ্যাজাক্স জুট মিলে বিভিন্ন স্থানে সার রয়েছে। সার রাখা বা গুদামজাত করার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। তারা তাদের শিপিং ও হ্যান্ডলিং ঠিকাদারদের মাধ্যমে এই ভাড়া দেন। তারা সরাসরি যুবলীগ নেতা লিংকনকে কোনো ভাড়া দেন না। তাদের আমদানি করা সার বিএডিসির সার গুদামে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত দায়দায়িত্ব থাকে শিপিং ও হ্যান্ডলিং এজেন্টদের।

যুবলীগ নেতা সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। ছবি : সংগৃহীত

এ্যাজক্স জুট মিলের মালিক প্রতিষ্ঠান সাবিল গ্রুপের এমডি আবদুল মান্নান হাওলাদার জানান, এ্যাজাক্স জুট মিলটি ২০১৪ সালের ২১ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। আর সাবিল গ্রুপ দায়িত্ব নিয়েছে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর। তবে এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। মিলের গুদামে এবং আশপাশে খোলা স্থানে সাজ্জাদুর রহমান লিংকন সার মজুদ করেছেন। মিলে প্রতিদিন ট্রাক ঢুকছে, সার লোড-আনলোড করা হচ্ছে।

আবদুল মান্নান হাওলাদার আরো বলেন, ‘লিংকন খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য বেগম মুন্নুজানের লোক। তাঁকে আমরা মানা করি কীভাবে?’ তিনি জোর দিয়ে বললেন, তাঁর মিলে সার গুদামজাত করা হলেও তাঁকে কোনো ভাড়া দেওয়া হয় না। মিলে তাঁর নিরাপত্তার লোক থাকার পাশাপাশি লিংকন সাহেবের লোকও রয়েছে।

সরেজমিনে এ্যাজাক্স জুট মিল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশে আর সব পাট গুদামে সার রাখা হয়েছে। ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়।

এ্যাজাক্স জুট মিলের সামনে ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি জায়গায় খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার বস্তা সার পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত একজন বলেন, ‘এই যে, আপনার ঢুকেছেন কেন, সব লিংকন স্যারের সার। তাঁর অনুমতি ছাড়া এখানে ঢোকা নিষেধ।’

এই জায়গার মালিক নিজের নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে জানান, লিংকন সাহেব তাঁদের জায়গায় সার রেখে ভাড়া আদায় করছেন। তাঁর জায়গার ওপর কোরবানির পশুর হাট বসিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়, দীঘলিয়া থানা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।

মিল মালিক আবদুল মান্নান হাওলাদার। ছবি : এনটিভি

এ ব্যাপারে রোববার রাতে  মুঠোফোনে যুবলীগ নেতা লিংকনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন, এ্যাজাক্স জুট মিল এবং এর আশপাশে তিনি সার রেখেছেন।’ মিল মালিক আবদুল মান্নান হাওলাদারকে ভাড়া না দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’ তিনি জানান, খানজাহান আলী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ছাড়াও তিনি জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। তিনি কোরবানির পশুর হাট নিয়ে ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

এ ব্যাপারে এ্যাজাক্স জুট মিল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাওসার জামান বাবলা বলেন, মিলের অভ্যন্তরে সার রাখলে মিলের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে। কে কীভাবে সার মিলের ভেতর ঢোকাল, তা জানেন না বলে জানান তিনি। মিলটি সোনালী ব্যাংকের ঢাকার বৈদেশিক শাখায় ৮০ কোটি টাকার ঋণী বলে জানান তিনি।