খাদ্য বিভাগ বলছে হ্যাঁ, মিল মালিকদের না
নওগাঁর পার্শ্ববর্তী বগুড়া, জয়পুরহাট, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমের আতপ চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। তবে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি না হওয়ায় নওগাঁর দুটি উপজেলার ২২ মিল মালিক আতপ চাল খাদ্য বিভাগের গুদামে সরবরাহ করতে পারছেন না।
মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩১ আগস্টের মধ্যে মিল মালিকদের সঙ্গে আতপ চালের চুক্তি সম্পাদনের কথা ছিল। তবে এ নিয়ে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় দুই সপ্তাহেও কোনো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি।
কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পরও আতপ চালের চুক্তি সম্পাদন নিয়ে মিল মালিক ও খাদ্য বিভাগ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।
নওগাঁ খাদ্য বিভাগ বলছে, নির্ধারিত সময় ৩১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁদের হাতে চুক্তিনামা এসে পৌঁছায়নি। এতে আতপ চালের মিল মালিকরা সরকারি গুদামে সরবরাহের জন্য প্রস্তুত করা চাল নিজ গোডাউনে রেখে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁর সদর ও মহাদেবপুর উপজেলায় এক হাজার ৭০০ টন আতপ চাল ৩১ টাকা কেজি দরে কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি মিল থেকে এক হাজার ২০০ টন এবং মহাদেবপুর উপজেলার ১০টি মিল থেকে ৫০০ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মিল মালিকদের দাবি, দুই উপজেলার ২২টি মিল মালিক আতপ চাল সরবরাহ করতে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করার প্রক্রিয়া শুরু করে। নিয়ম অনুয়ায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হওয়ার কথা ছিল। নওগাঁ সদর উপজেলার মিল মালিকরা চুক্তিনামা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী ও মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মকলেচ আল আমিনের কাছে দাখিলও করেন। কিন্তু আতপ চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে তাঁদের আর্থিক লেনদেন নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় এখন পর্যন্ত মিল মালিকদের চুক্তির ফাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে পড়ে আছে।
নওগাঁর সৌরভ পার-বয়লার চালকলের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম নাথু ও মিরজান আতপ চালকলের স্বত্বাধিকারী মকবুল হোসেন মুকুল জানান, সরকারিভাবে স্বাভাবিক নিয়মে সারা দেশের মতো নওগাঁয় এক হাজার ৭০০ টন আতপ চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু এই স্বাভাবিক বরাদ্দকে বিশেষ বরাদ্দ বলে দাবি করেন নওগাঁ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী ও মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মকলেচ আল আমিন। আর এই বিশেষ বরাদ্দ আনার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়েছে বলে ২২ জন মিল মালিকের কাছে টনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁরা এক হাজার ৭০০ টন আতপ চালের বিপরীতে ৩৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করার চেষ্টা করেন।
কয়েকজন মিল মালিক জানান, নওগাঁ ও মহাদেবপুরের মিল মালিকরা টনপ্রতি দুই হাজার টাকা ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁরা টনপ্রতি ৭০০ টাকা দিতে রাজি হন। এতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা রাজি না হওয়ায় শুরু হয় দ্বন্দ্ব। আর এ দ্বন্দ্বের জের ধরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা মিল মালিকদের চুক্তিনামা ফাইলবন্দি অবস্থায় রেখে দেন। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের ১৪ দিন পরও চুক্তিনামা হাতে না পাওয়ায় খাদ্যগুদামগুলোতে আতপ চাল সরবরাহ করতে পারছেন না মিল মালিকরা। এতে ভুক্তভোগী মিল মালিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় মহাদেবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মকলেচ আল আমিন ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, মিল মালিকদের খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তির ফাইল প্রসেস করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। তবে চুক্তি হয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
নওগাঁ সদর উপজেলা মিল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতাহার হোসেন পলাশ খাদ্য বিভাগের সঙ্গে আর্থিক দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে বলেন, এটা ভুল বোঝাবুঝি। বিষয়টি নিয়ে খাদ্য বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা হয়ে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে নওগাঁয় আতপ সংগ্রহ শুরু হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, ‘আমরা চাল ব্যবসায়ীরা খাদ্য বিভাগের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাদের চাহিদা পূরণ না হলে এক ছটাক চালও গুদামে তোলার নির্দেশ দেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।’ তিনি জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে মিল মালিক-খাদ্য কর্মকর্তাদের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের পর সম্ভবত আর্থিক সমঝোতা হওয়ার পরেই ব্যাকডেটে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চুক্তিনামায় সই করেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, নির্ধারিত সময়ে মিল মালিকদের সঙ্গে আতপ চাল কেনার চুক্তিনামা সম্পাদিত হয়েছে। তবে নওগাঁ সদর এবং মহাদেবপুর উপজেলার খাদ্য গুদামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় দেরিতে আতপ চাল সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগে বোরো চাল সরবরাহ করার জন্য যারা চুক্তিবদ্ধ আছে, তাদের চাল আগে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বোরো চাল সংগ্রহের শেষের দিকে আতপ চাল সংগ্রহ শুরু করা হবে। আতপ চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।