গরিবের ‘২৬০০’ কেজি চাল মিলল পুকুরে

Looks like you've blocked notifications!
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামের পুকুর থেকে তোলা হচ্ছে ভিজিএফের চাল। ছবি : এনটিভি

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের পাঁচটি পুকুর থেকে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়েছে। চাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ালে আজ মঙ্গলবার সকালে পুকুরগুলো থেকে তা উদ্ধার করা হয়।

এর আগে একই উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের পৃথক তিনটি গুদাম থেকে ১০৪ বস্তা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে এক হাজার ৪৪৪ কেজি ভিজিএফের চাল উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার হরিপুর গ্রাম পরিদর্শন করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা ।

হরিপুর গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে গ্রামের আজিজুল সাহার মাছের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কোরবানির পশুর বর্জ্য পচে এ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এমনটি মনে করেন তারা। আজ সকালের দিকে দুর্গন্ধের মাত্রা  আরো বৃদ্ধি পায়। এতে আশপাশের মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে পড়েন। তারা সেখানে ছুটে যান। একপর্যায়ে কৌতুহলী লোকজন  পুকুরে নেমে পড়েন। এরপর হতবাক হয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে ছুটে যান ইউএনও শাম্মী ইসলাম। তাঁর উপস্থিতিতে পানিতে ডুব দিয়ে মুঠো মুঠো চাল তুলে আনতে থাকেন গ্রামের লোকজন। খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। শত শত নারী পুরুষ ছুটে যান সেখানে।

বাঁশ বাগানে ঘেরা আজিজুলের মাছের খামারে। শুধু সেখানে নয়, অসুস্থ সিরাজুলের ছোট ডোবায় চাল পচে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল কাদের ও কদম আলী দুঃখ করে বলেন, চাল পচা গন্ধে বাড়িতে টিকতে পারছেন না তারা। ভিজিএফের চাল পানিতে ফেলে দেওয়ার কথা শুনেছেন তারা।

তবে কারা এ কাজ করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে জড়িতদের  নাম বলতে রাজি হননি ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির চম্পা। গ্রামের একাধিক পুকুরে পাওয়া চাল ভিজিএফের বলে দাবি করেন গ্রামবাসী।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহরাজপুর ইউনিয়নের ২ হাজার ৩৪৭ জন হতদরিদ্রের জন্য  ৪৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ চালের বড় একটি অংশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

হরিপুর গ্রামের চাল ব্যবসায়ী আজিজুল সাহা অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, ভিজিএফের ৫২ বস্তা (২৬০০ কেজি) চাল কিনেছিলেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যানের কাছের আত্মীয় বিষয়খালী গ্রামের সবুজ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে এ চাল  কিনেছিলেন তিনি। পরে সেই চাল স্থানীয় বিষয়খালী বাজারের আছিয়া রাইচ মিলের গুদামে রাখেন তিনি। কিন্তু দ্রুত বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়ে। ভয় পেয়ে হরিপুর গ্রামের বাড়িতে চাল নিয়ে যান এবং ঈদের পরের দিন নিজের ও প্রতিবেশীদের পুকুরের পানিতে বস্তা খুলে চাল ছড়িয়ে দেন  তিনি।

সোমবার সন্ধ্যায় চাল পচা গন্ধ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুর্গন্ধের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়।

মোবাইল ফোনে আজিজুল আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চাল কিনে বিপদে পড়েছেন এবং বর্তমানে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন তিনি।

এ চালের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খুরশিদ আলম বলেন, ঈদের দুইদিন আগে ২০ আগস্ট চাল বিতরণ করা হয়। বরাদ্দ করা চালের একটি অংশ সরকারি দলের স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি মফিজুল ইসলাম, পার্থ ঘোষ ও জনি আহম্মেদ বিতরণ করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি দলের স্থানীয় এমপির এই তিনজন প্রতিনিধি ৭০০ জনের ভিজিএফ কার্ড তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন। চাল বিতরণে অনিয়ম করা হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হরিপুর গ্রামের আজিজুল সাহা ধান চালের ব্যবসা করেন। তাঁর কাছে কেউ চাল বিক্রি করলে কিছুই করার নেই তাঁর।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, সদর উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে আরা এ ইউনিয়নে চাল বিতরণ তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল আপনার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয়েছিল কিনা? উত্তরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি ।

সদর উপজেলার ইউএনও শাম্মী ইসলাম বলেন, ভিজিএফের বরাদ্দ করা চাল পানিতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিকভাবে জড়িত চাল ব্যবসায়ী আজিজুল ও সবুজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।