চট্টগ্রামে বাস থেকে ফেলে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
চট্টগ্রামে চলন্ত বাস থেকে ফেলে রেজাউল করিম রনিকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন তাঁর বন্ধু ও স্বজনেরা। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন করা হয়।
এ সময় নিহত রনির এক বন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়কে কেন্দ্র করেই কিন্তু মূলত হেলপারের সঙ্গে তাঁর (রনি) বাকবিতণ্ডা হয়। এবং পরবর্তীতে উত্তেজিত মস্তিষ্কে হেলপার এবং ড্রাইভার পরিকল্পনা করে তাঁকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এবং তাঁকে পিষ্ট করে আরো কিছুদূর নিয়ে যায়, যাতে করে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা যায়। এবং যাত্রীরা তাদের ধরার চেষ্টা করার আগেই তারা জানালার কাঁচ ভেঙে পালিয়ে যায়।’
এ সময় আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘তাঁর (রনি) সাথে গাড়ির যে হেলপার ছিল, হেলপারের বাকবিতণ্ডা হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে গাড়ির হেলপার তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার পর সে গাড়িতে যখন চলে যাচ্ছিল, পেছনের যে চাকাটা ছিল, সেই চাকাটা তাঁর বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়। আমাদের দাবি হচ্ছে, যেহেতু সে মারা গিয়েছে আমরা তাঁকে ফিরে পাব না। যে বেপরোয়াভাবে তাঁকে হত্যা করেছে, তাদের বিচারের শাস্তি দাবি করছি। এবং সরকার যে আইন প্রণয়ন করেছে, এ আইনের মধ্য দিয়ে তাদের বিচার নিশ্চিত করা যায়। যদি কোনো কিন্তু না থাকে। আমরা দাবি করব সড়ক মন্ত্রণালয়ের যারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছেন, তাঁরা অতি স্বত্বর এই ধরনের মৃত্যুর মিছিলগুলা রোধ করবে। এবং এই ধরনের বেপরোয়া হত্যাকাণ্ডের যারা দোষী, তাদের যদি আমরা আইনের আওতায় আনতে না পারি, তাহলে আজকে আমি নিরাপদ নই, কাল আপনি নিরাপদ নয়। এভাবে অকালে ঝড়ে পড়বে আমাদের সমাজের অনেক বন্ধু-বান্ধব।’
চট্টগ্রাম নগরীর আকবার শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আসলে কালকে আমরা ওইখানে সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত হই। উপস্থিত হওয়ার পরে আমরা বিষয়টা জানতে পারি যে, একজন যাত্রীকে একটা বাস থেকে ফেলে দিছে বা পড়ে গেছে এমন কিছু। তাৎক্ষণিকভাবে তখন উপস্থিত লোকজন রাস্তা ব্যারিকেড করার চেষ্টা করে। তাদেরকে বুঝায়া-সুঝায়া রাস্তা থেকে সরায়া দেই। এক্সিডেন্টকারী যে গাড়ি, গাড়িটাকে থানায় নিয়ে আসি। এবং ওই গাড়ির সূত্র ধরে আমরা মালিকের সঙ্গে কথা বলি। মালিককেও আমরা থানায় ডাকি। উনার কাছ থেকে ড্রাইভার এবং হেলপারের আমরা যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করি। আমরা তাদের বাড়িঘরে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু ঘটনার পরপরই তারা সরে যাওয়ার কারণে, তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে, আমাদের টিম এখনো কাজ করছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য। এখন পরিস্থিতি মোটামুটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
গতকাল দুপুরে নগরীর ভাটিয়ারী থেকে সিটি গেইট আসার পথে চলন্তবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান প্রবাসী যুবক রেজাউল করিম রনি। লুসাই পরিবহনের একটি বাসের হেলপারের সঙ্গে বাড়তি ভাড়া নিয়ে তাঁর কথা কাটাকাটি হয়। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করায় প্রতিবাদ করেন রনি। পরে তাঁকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে পিষ্ট করে পালিয়ে যান চালক ও হেলপার। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার আগে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন ওই বাসের যাত্রীরা।