রাজশাহীতে থামছে না ছাত্রদলের কোন্দল
কোন্দল থামছে না রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলে। নগরের ছয়টি থানা ও তিনটি কলেজে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয় উত্তেজনা। ভাঙচুর করা হয় মহানগর বিএনপি কার্যালয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে ঘোষিত নতুন কমিটিগুলো স্থগিত করলেও মহানগর ছাত্রদলে বিরাজ করছে ক্ষোভ। এর বহিপ্রকাশ ঘটেছে বৃহস্পতিবার মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনির বাড়িতে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে।
দুপুর সোয়া তিনটায় মহানগর ছাত্রদলের একাংশ মোটর সাইকেল নিয়ে নগরীর রামচন্দ্রপুর বাসার রোডে জনির বাসায় হামলা চালায়। এর আগে দুপুরে মহানগর বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে আদালত চত্বরে ছাত্রদলের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি জানান, ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন। মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী প্রথমে তাদের বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করে। বাসায় প্রবেশ করতে না পরে তারা বাইরে থেকে বাসায় ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এতে তার বাসার জানালার বেশ কিছু কাঁচ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হামলাকারীরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে অকথ্যভাষায় গালাগালাজ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
সম্প্রতি ঘোষিত ও পরে স্থগিত হওয়া নয়টি ইউনিট কমিটির পদবঞ্চিতরা এ হামলা চালিয়েছে দাবি করে আসাদুজ্জামান জনি বলেন, ‘এর আগে তারাই মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছিল। পরে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর এবং নতুন নেতৃবৃন্দকে মারপিট করেছিল।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত চত্বরে মারামারির জের ধরে তার বাসায় এ হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন জনি।
জনি বলেন, ‘মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর জ্যাকি নেতৃত্বে তাঁর বাসায় হামলায় মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মুর্তুজা ফামিন, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ ও সদস্য কনকসহ ১৫/১৬ জন মোটরসাইকেল নিয়ে অংশ নেয়। খবর পেয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তার বাসায় গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।’
এর আগে রাজশাহী আদালত পাড়ায় ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে মামলার হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে এসে মহানগর বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।
ওসি হাফিজুর জানান, নাশকতার একটি মামলায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজিরা দিতে যান মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনসহ দলটির নেতাকর্মীরা। মামলার হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে আহতদের মধ্যে জ্যাকি ও লুকেন নামের দুইজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর আগে গত ১৮ আগস্ট রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রবির স্বাক্ষরে নগরীর তিনটি কলেজ ও ছয়টি থানা কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে অযোগ্য ও অছাত্রদের অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা। পরদিন রোববার রাজশাহী মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় পদবঞ্চিতরা। বিকেলে তালা ভেঙ্গে নতুন কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও অন্যান্যরা মিলে পরিচিতি সভা করে। সভায় পদবঞ্চিত নেতাদের অংশগ্রহণের আহবান জানানো হলেও তারা উপস্থিত হননি। পরদিন মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটির সভা চলাকালে নব গঠিত রাজপাড়া থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল ইসলাম রাতুলের উপর হামলা করে পদবঞ্ছিত নেতাকর্মীরা। এ সময় রাতুল ও কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী আহত হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার নাশকতার মামলার হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আগের হামলার রেশ ধরে স্থগিতকৃত রাজপাড়া থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল ইসলাম রাতুলসহ কয়েকজন মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি ও বোয়ালিয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক লুকেনের উপর হামলা করে। এতে ছাত্রদলের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এর জের ধরে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনির বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালনো হয়।
হামলার বিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘ছাত্রদল সভাপতির বাড়িতে হামলার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ আর মহানগর যুগ্ম সম্পাদক আকবর আলী জ্যাকি বলেন, ‘মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দের সামনেই বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত চত্বরে আমাকে এবং বোয়ালিয়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক লুকেনের উপর হাতুড়ি, ইট ও ছুরি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন না ধরলে আমার প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল।’ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সম্পাদকের ইন্ধনে এই হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিকে ছাত্রদল নেতাদের দাবি, মহানগর বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে মহানগর ছাত্রদলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে একের পর এক প্রতিহিংসার ঘটনার জন্ম দেওয়া হচ্ছে। নিজের স্বার্থ হাসিল করতে ছাত্রদলকে নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতেই এসব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
ছাত্রদলের এসব ঘটনার বিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর বিএনপি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি।