ভৈরবের জব্বার জুট মিল বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকদের বিক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার জব্বার জুট মিলস আজ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বে কারখানা খুলে দেওয়াসহ আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দাবিতে মিল এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জব্বার জুট মিলস নামের পাটকল আজ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববাজারে মন্দার কারণে বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত ব্যাগ অবিক্রিত থাকা, দেশে পাটের বাজার দর বৃদ্ধি-এইসব কারণ দেখিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়।

এদিকে ঈদের ছুটি শেষে আজ থেকে কাজে যোগ দিতে আসা শ্রমিকরা বন্ধের নোটিশে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে অবিলম্বে কারখানা খুলে দেওয়াসহ আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দাবিতে মিল এলাকায় বিক্ষোভ করেন তারা।

বিক্ষোভরত শ্রমিকদের পক্ষে মো. রাশেদ মিয়া, পিয়ারা বেগম ও আলমগীর হোসেন জানান, হঠাৎ করে মিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করায় তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন। অর্ধাহারে-অনাহারে তাদের জীবনযাপন করতে হবে। শ্রমিকদের অসহায়ত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা অবিলম্বে মিলটি খুলে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।

এদিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে বেলা ১১টার দিকে মিলটির প্রশাসনিক কর্মকর্তারা শ্রমিকদের নিয়ে এক আলোচনা সভায় মিলিত হন। এ সময় আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ এবং শনিবারের মধ্যে মিলটি খুলে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এইসব তথ্য জানিয়ে শ্রমিকনেতা রাশেদ মিয়া জানান, অন্যথায় শনিবারের পর তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হবেন।

এদিকে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে জব্বার জুট মিলসের  মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পাটজাত পণ্যের মন্দাভাব থাকায় অনেক চেষ্টা করেও মিলের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে বর্তমানে তাদের মিলে উৎপাদিত পণ্য রাখার মতো স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মিলের সমাপনী গোডাউন, সমাপনী বিভাগ, তাঁত বিভাগ এবং পাট গোডাউনে উৎপাদিত পণ্য রাখা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার জব্বার জুট মিলস আজ শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বে কারখানা খুলে দেওয়াসহ আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার দাবিতে মিল এলাকায় বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

একদিকে পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে চলতি বছর পাটের দাম অত্যন্ত বেশি। আবার মিল চালানোর মতো স্টকে কোনো পাটও নেই। এছাড়া বেশি দামে পাট কেনার পর উৎপাদন মূল্য আরো বেশি হবে। উৎপাদিত পণ্য রাখার জায়গা নেই, আবার বিক্রিও নেই। কাঁচামালের মূল্যও বেশি। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদিত পণ্যের মজুদ বৃদ্ধি ও পণ্য বিক্রি না হওয়াজনিত মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে এই মুহূর্তে মিল চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

অতএব অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় অর্থাৎ উৎপাদিত পণ্য রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং পাটের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করা এবং পাট সংগ্রহ করে দ্রুত মিল চালু করার জন্য।

এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জব্বার জুট মিলসের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, মিলটিতে সম্পূর্ণ রপ্তানিযোগ্য পাটের ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। এখানে সাড়ে তিন হাজার বেল ব্যাগ মজুদ রাখার ধারণ ক্ষমতা থাকলেও, বর্তমানে ৫ হাজার ২০৩ বেল ব্যাগ মজুদ আছে। আর এইসব মজুদকৃত ব্যাগ মিলের দুটি গুদামে স্থান সংকুলান না হওয়ায়, কারখানার ফ্লোরের এখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে পাটের তৈরি ব্যাগের মন্দার কারণে খুব দ্রুতই যে এইসব ব্যাগ বিক্রি সম্ভব হবে, এমনটি আশা করতে পারছে না মিল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আবার গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের বাজার দর মণ প্রতি ৪ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট সংগ্রহও করা যাচ্ছে না।

মিল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই বর্ধিত দরে পাট কিনলে প্রতিটি ব্যাগের মূল্য বৃদ্ধি পাবে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। যা বিক্রির বেলায় ব্যাপক কু-প্রভাব পড়বে।

২৫০ তাঁতের এ মিলটি একটি বৃহৎ পাটশিল্প প্রতিষ্ঠান বলে উল্লেখ করে মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র নদীবন্দর ভৈরবে ১৯৬৬ সালে জব্বার জুট মিলস নামের এই মিলটি নির্মিত হয়। ১৯৬৮ সালে মিলটিতে উৎপাদন শুরু হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার মিলটি জাতীয়করণ করে।

১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে আবারও ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হতে থাকে মিলটি। ২০০৯ সালে বর্তমান শ্রমিকবন্ধব শিল্পপতি আমিনুর রশিদ খাঁন মিলটি কিনে নিয়ে অত্যন্ত দক্ষতা এবং সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করছেন। ‘সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পাটপণ্যের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে ধারণ করে কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ রপ্তানিযোগ্য হেসিয়ান ক্লথ এবং সেকিং ক্লথ দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ব্যাগ উৎপাদন করছে মিলটিতে। উৎপাদিত এই ব্যাগগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।

এছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিসিআইসি এবং খাদ্য বিভাগের চাহিদানুযায়ী ব্যাগ তৈরি করে সরবরাহ করা হয়। এটিকে কিশোরগঞ্জ জেলার বৃহত্তম একটি ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ জানায়, মিলটিতে বর্তমানে ৭০০ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। দৈনিক ৯ থেকে ১০ টন পাটজাত পণ্য এখানে উৎপাদিত হচ্ছিল।

বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতির জন্য মিল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছে মিলটি সাময়িকভাবে বন্ধ করতে-এমন বক্তব্য তুলে ধরে মিলটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের প্রচেষ্টা থাকবে এইসব বাধা মোকাবিলা করে যতটা সম্ভব দ্রুত মিলটি খুলে দেওয়া।

রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ আরো জানান, মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুর রশিদ খাঁন একজন শ্রমিকবান্ধব মালিক। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি দ্রুত কাটিয়ে মিলটি খুলে দিতে খুবই আন্তরিক। সেইভাবে কাজ করতে তাদেরকে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।