পরকীয়া প্রেমিকার ডাকে বেরিয়ে প্রাণ হারান যুবলীগ নেতা

Looks like you've blocked notifications!
হত্যার শিকার নেত্রকোনার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এম এ হারেছ। পুরোনো ছবি

নেত্রকোনার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এম এ হারেছ (৩৫) হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় নেত্রকোনা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) প্রীতেশ তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং পরকীয়া দুই কারণে পরিকল্পিতভাবে খুন হন হারেছ। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রীতেশ তালুকদার জানান, খুনের পর এই খুনের পরিকল্পনাকারীদের একজন এবং নিহত হারেছের প্রেমিকা শিরিন রাজধানী ধানমণ্ডির ঝিগাতলা এলাকার এক বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে আত্মগোপন করেন। এ সময় সুফিয়া নাম ধারণ করেন তিনি। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে তিনদিন সবজি বিক্রেতার বেশে ওই এলাকায় যান সিআইডি কর্মকর্তারা। পরে গত ৭ আগস্ট শিরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেই বেরিয়ে আসে সব তথ্য।

নিজের জবানবন্দিতে শিরিন জানান, এম এ হারেছের সঙ্গে একই গ্রামের আবদুস ছালামের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে ছালাম সব সময় হারেছকে ঘায়েল করতে চেষ্টা করতেন। এদিকে, হারেছের সঙ্গে আলমগীর ওরফে আলমের স্ত্রী শিরিনের পরকীয়া চলছিল।

বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগ নেন ছালাম। তিনি আলমগীরকে ক্ষেপিয়ে তুলতে থাকেন। এ নিয়ে আলমগীরের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শিরিনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং তাঁর সঙ্গে সংসার করবেন না বলে শিরিনকে তিন মাস আগে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

এদিকে পরিকল্পনা চলতে থাকে ছালামের। তিনি আলমগীর ও শিরিনের ফোনালাপ করিয়ে দেন। দুজনকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এবং আবার ঘর-সংসার করার প্রলোভন দেখান।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ জুন শিরিনকে দিয়ে ফোন করিয়ে কৌশলে হারেছকে শিরিনের বাবার বাড়িতে আসতে বলা হয়। হারেছ রাত ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রীকে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখে আসার কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

পরে হারেছ শিরিনের বাবার বাড়ির কাছাকাছি এলে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা ছালাম, কমল, কাদির, সাজু, কাঞ্চন, লাল মিয়া ও আলমগীর তাঁকে ধরে ফুডা বিলের পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে হারেছের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে তাঁর পেট ছিদ্র করে লাশ গুম করার জন্য বিলের পানিতে ফেলে দেন।

পরের দিন ফুডা বিলের পানি থেকে লাশ উদ্ধার করার পর নিহতের ভাই ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় হত্যা মামলা  করেন।

এ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মতিউর রহমান ও অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার সাঈদ আহমেদের নেতৃত্বে তদন্ত চলার সময়ে শিরিনের আত্মগোপন করার তথ্য পেয়ে সবজি বিক্রেতা সেজে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

পরবর্তী সময়ে শিরিন নেত্রকোনার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

নিহত এম এ হারেছ সদর উপজেলার মৌগাতী ইউনিয়নের বাদে বহর গ্রামের ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।