সাবেক দুই সিইসি বললেন

ইভিএম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না

Looks like you've blocked notifications!
আজ বুধবার ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে ফেমবোসা সম্মেলনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাবেক সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবদুর রউফ। ছবি : এনটিভি

চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, সব দল চাইলেই কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। সাবেক সিইসি ড. এটিএম শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবদুর রউফ মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব সরকারের।

আজ বুধবার ঢাকার র‌্যাডিসন হোটেলে ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিজ অব সাউথ এশিয়ার (ফেমবোসা) সম্মেলনে সাংবাদিকদের তাঁরা এসব কথা বলেন।

ইভিএম ব্যবহার করে সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তোড়জোর নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল চায় না জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হোক। বাংলাদেশে এই যন্ত্রে প্রথম ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন ড. এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি বললেন, এই যন্ত্র এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে, তাই তা ব্যবহার করতে হলে সবদলের ঐকমত্য প্রয়োজন।

এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, ইভিএম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কিংবা এটা নিয়ে তাড়াহুড়া করা ঠিক হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এটি ব্যবহার করে সবার মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে জাতীয় নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাবেক সিইসি বলেন, যেকোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগে তা যথোপযুক্ত কি না, তা ভেবে দেখা উচিত। ইভিএম ব্যবহারের জন্য যারা আরপিও সংশোধন করছে এবং যারা ক্ষমতায় আছে বিষয়টি তাদের আরো ভালো করে ভেবে দেখা উচিত ছিল। নির্বাচন খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এটা প্রতিযোগিতারও বিষয়। ক্ষমতা দখলের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। রুলস অব দ্য গেম, লেভেল প্লেইং ফিল্ড এগুলো নিশ্চিত না করলে তো খেলা সমান হবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।

এ টি এম শামসুল হুদা আরো বলেন, ইভিএম নিয়ে এত তাড়াহুড়ার তো কিছু নেই। এটি এখনো পুরোপুরিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আরো বেশি করে ব্যবহার করা উচিত। তারপর সেটা মনিটর করে, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কী সুবিধা কিংবা কী অসুবিধা যাচাই-বাছাই করেই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে করা যেতে পারে।

সাবেক সিইসি বলেন, চারদিকে ইভিএম বিতর্ক দেখে দেখে মনে হচ্ছে আমাদের কমিশনের সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। আমরা বলেছিলাম, আমরা হুট করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করব না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটা আমরা প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। স্থানীয় সরকারের কিছু কিছু জায়গায় এটা করব এবং আমরা সেটা করেও ছিলাম। মানুষ কিন্তু তাতে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছিল।

শামসুল হুদা আরো বলেন, আমাদের সময় চালু হওয়া ইভিএমের ধারাবাহিকতা থাকলে আজকের বিতর্কের জন্ম হতো না। আমাদের উদ্যোগকে পরের কমিশন কোল্ডস্টোরেজের মধ্যে ফেলে রাখল। সেই ফেলে রাখা উদ্যোগকে আবার এই কমিশন চালু করেছে।

এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, যে মেশিনটা উদ্ভাবন করা হলো তাতে আরো কী কী নিরাপত্তা সংযুক্ত করা যায়। আরো কীভাবে উন্নতি করা যায় সেসব চিন্তা করে উন্নতি করা উচিত এবং সব শেষে সব রাজনৈতিক দলসহ সবাই যখন বলবে ঠিক আছে তখনই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার করা উচিত।

এক প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব মূলত সরকারের। সরকারই এটা করবে। তারা না করতে পারলে এটা অবশ্যই অসুবিধার কথা। কী করলে জনগণ আস্থা অর্জন করতে পারে সরকারকেই সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ টি এম শামসুল হুদার পাশে উপস্থিত ছিলেন আরেক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আবদুর রউফ। সে সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে অধিকাংশ লোক ভালোভাবে জানেন না। এই প্রযুক্তি সম্পর্কে তাদের আগে জানাতে হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করে জাতীয় নির্বাচনে নিয়ে যেতে হবে।

আবদুর রউফ বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ইভিএম চালু আছে, আবার কোনো কোনো দেশ এটা বন্ধও করে দিয়েছে। আমি প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার জানার পর ব্যবহার করতে আগ্রহী।

আপনার (শামসুল হুদা) হাতে গড়া আঞ্চলিক সংগঠন ফেমবোসা এখন পর্যন্ত কতটা সফল হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুল হুদা বলেন, ২০১০ সালে ফেমবোসা গঠনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। তারপর থেকে পর্যায়ক্রমে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে আজকে নবম সম্মেলন হচ্ছে। সব দেশ ভালো মানের নির্বাচন করতে পারে না। যারা পারছে না তার পেছনের কারণ কী। আর যারা পারছে সেটাও কী কারণে সম্ভব হয়েছে। ভালো নির্বাচনের পেছনে কী কী সমস্যা রয়েছে তা রিভিউ করা এর উদ্দেশ্য ছিল। আমি মনে করি ফেমবোসা সেই কাজটি করছে।

শামসুল হুদা আরো বলেন, তবে এটার উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে, তা অনেক বড় প্রশ্ন। কারণ নির্বাচনে অনেকগুলো পক্ষ রয়েছে তারা সবাই মিলে নিয়ম অনুযায়ী খেলাটা না খেললে কেবল কমিশনের একার পক্ষে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন একা কখনোই ভালো নির্বাচন দিতে পারবে না। আর আমরা এই বিষয়টি ভুলে গিয়ে সবাই কমিশনের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করি।

আজ সকালে দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হলো সংসদ। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের আস্থা অর্জন জরুরি।

অনুষ্ঠানে বর্তমান সিইসি কে এম নুরুল হুদা, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর নির্বাচন পরিচালনার পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।