প্রলম্বিত বর্ষায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব
প্রলম্বিত বর্ষার কারণে চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলতি বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মশাবাহিত এই রোগে এক হাজার ২৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, চলতি বছর বর্ষার ব্যাপকতায় বিগত মার্চ মাস থেকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
ডেঙ্গুবাহী মশা সাধারণত দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায়। এ জন্য এই মশা প্রতিরোধে বাসাবাড়ি ও কর্মস্থলে কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা, ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে স্থান না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ডেঙ্গু মশা সকালে ও বিকেলে কামড়ায়। এই মশার কামড়ের হাত থেকে স্কুলগামী শিশুদের রক্ষায় তাদের ফুলশার্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠালে ভালো হয়।
ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেসের (ডিজিএইচএস) কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, রেকর্ডপত্র থেকে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগ এক বছর পর পর আরো তীব্রতা নিয়ে ফিরে আসে।
ডিজিএইচএসের ন্যাশনাল হেলথ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আখতার বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ২৭৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন নমুনা তুলে ধরে তিনি বলেন, গতবছর এ সংখ্যা ছিলো ৭৭৭ জন। কিন্তু এর আগের বছর ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৪৯ জন।
এ ক্ষেত্রে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলকি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি বছরের দীর্ঘ বর্ষায় মশা ও ডেঙ্গুবাহী মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। তবে স্বস্তির বিষয় যে, এবারে ডেঙ্গু রোগী বেশি হলেও মরণঘাতী ‘হোমোরেজি’ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্ষা মৌসুম শেষের সঙ্গে ডেঙ্গুও নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের পুনরায় এই জাতীয় রোগের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ জন্য তাদের এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি শিগগিরই মশা মারার ওষুধ ছিটানো অভিযানও শুরু হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বর্ষার সময় মশার ওষুধ তেমন কাজে লাগেনি। বর্ষা বিদায় নেওয়ায় আমরা পুরোদমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। এ ছাড়া ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রচারণা কর্মসূচিতে এরই মধ্যে বাউলশিল্পীদেরও সম্পৃক্ত করা হয়েছে।