গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ধার্য হবে কাল

Looks like you've blocked notifications!

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন আগামীকাল মঙ্গলবার ধার্য করা হবে। এ ছাড়া এ মামলায় জামিনে থাকা আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হবে আগামীকাল।  

জামিন বাতিল চাওয়া আট আসামি হলেন, আশরাফুল হুদা (সাবেক আইজিপি), শহিদুল হক (সাবেক আইজিপি), খোদা বক্স চৌধুরী (সাবেক আইজিপি), রুহুল আমীন (সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার), আব্দুর রশিদ (সাবেক এএসপি), মুন্সি আতিকুর রহমান (সাবেক এএসপি), সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং আরিফ কমিশনার।

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে ২১ আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে।

আজ আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত এ দিন ধার্য করেন।

পাঁচজন আসামির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাঈনুদ্দিন এবং  অপর আসামিদের পক্ষে আইনি পয়েন্টে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্ক পেশ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসামিপক্ষে পেশ করা আইনি পয়েন্টের আলোকে আগামীকাল রাষ্ট্রপক্ষের শেষ বারের মতো সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ও যুক্তি দেওয়া হবে। কাল মঙ্গলবার মামলার বিচারকার্য শেষ হচ্ছে এবং রায় ও আদেশের দিন ধার্য হবে।’

রাষ্ট্রপক্ষে সৈয়দ রেজাউর রহমান ওই হামলা সংগঠনে হাওয়া ভবনসহ ১০টি ষড়যন্ত্রের স্থানের নাম উল্লেখ করে ওই স্থানগুলোতে বসেই ২১ আগস্ট হামলার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের ছক করা হয়েছে বলে তিনি যুক্তি দেন।

সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘২১ আগস্ট হামলায় ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধারকৃত চারটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হলেও আদালতের অনুমতি ছাড়াই সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।’ তিনি ‘হেয়ারস এভিডেন্স’ বিষয়ে রেফারেন্স পেশ করেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংবলিত ২৫টি পত্রিকা আদালতে দাখিল করেন তিনি।

এ ছাড়া  মামলায় আট আসামি জামিনে রয়েছেন উল্লেখ করে প্রধান কৌঁসুলি মামলার রায়ের আগে আসামিদের  জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন দাখিল করেন।

মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ এ দাবি করে আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার আর্জি পেশ করা হয়।

সৈয়দ রেজাউর রহমান আদালত, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যগণসহ এ মামলার কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার বক্তব্য সমাপ্ত করেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষে তিন কার্যদিবস আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল, ‘বিশেষ পিপি মো. আবু আব্দুল্লাহ্ ভূঁইয়া ও আকরাম উদ্দিন শ্যামল আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশ করেন। ১১৮ কার্যদিবস শেষে মামলাটি এই পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৯ কার্যদিবস আর আসামিপক্ষ নিয়েছে ৮৯ কার্যদিবস।

২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এরা হলেন-জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো: মুজাহিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল।

এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। 

এছাড়া আট আসামী জামিনে রয়েছেন তারা হলেন-আশরাফুল হুদা সাবেক (সাবেক আইজিপি), শহিদুল হক (সাবেক আইজিপি), খোদা বক্স চৌধুরি, (সাবেক আইজিপি), রুহুল আমীন বিশেষ পুলিশ সুপার, আব্দুর রশিদ সাবেক এএসপি, মুন্সি আতিকুর রহমান সাবেক এএসপি, লে: কমাণ্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং আরিফ কমিশনার।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণেন্দ্রীয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।