বিচারক বললেন

চুলচেরা বিচার করার ক্ষমতা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার হাতে

Looks like you've blocked notifications!
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি : ফোকাস বাংলা

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা ও আট আসামির জামিন বাতিল করার আগে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন সবাই উদ্দেশে বলেন, এ মামলার পরিসমাপ্তি তো টানতে হবে। আমি হৃদয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি। তবে চুলচেরা বিচার করার ক্ষমতা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার হাতে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণের আগে এসব কথা বলেন।

মামলার শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ‘এ মামলার দীর্ঘদিন যাবৎ শুনানি হয়েছে। আপনারা আসামিপক্ষ এবং রাষ্ট্রপক্ষ বলে গেছেন। আমি একাই সব কিছু শুনে গেছি। আমি আসামি, আইনজীবী, প্রসিকিউটর সবাইকে পর্যবেক্ষণ করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। এ আদালতের সব দরজা, জানালা, বাতি সব কিছুই আমার কাছে আপন হয়ে গেছে। আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য হয়ে গেছি। সেটা আমি হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি। কিন্তু মামলার পরিসমাপ্তি তো করতেই হবে। এখানে বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। আমি বোঝার চেষ্টা করছি। চুলচেরা প্রকৃত বিচার করার ক্ষমতা একমাত্র সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবু আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব চেষ্টা করব।

আমি এ মামলায় যারা অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞ কৌঁসুলি টিএম আকবরকে স্মরণ করছি এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাঁর সঠিক তথ্যনির্ভর প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপনের জন্য এবং সিনিয়র আইনজীবীদের সহযোগিতার কারণে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মামলার শেষ পর্যন্ত আসামিদের সহযাগিতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা, আইনজীবীদের সহযোগিতার কারণে শুনানি শেষ করতে পেরেছি।

এ মুহূর্তে খন্দকার মাহবুব হোসেন, আব্দুর রেজাক খান, এস এম শাহজাহান এসে আমাদের আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে অলংকৃত করেছেন। তাই তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের সবার সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। আপনাদের আইনের ব্যাখ্যা হয়েছে। এখন একটি সিদ্ধান্তে আসার সময়। এ ছাড়া মিডিয়ার যারা সবাই দায়িত্বপালন করেছে, তাদের অনেকের নিউজ আমি দেখেছি। মিডিয়ার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’

এরপর আদালত আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ সময় আসামিরা আদালতের সামনে সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি চেয়ারে বসা ছিলেন। আদালতের আদেশের আগে আসামিদের অনেকটা বিমর্ষ অবস্থায় দেখা যায়।      

আজ দুপুর দেড়টার দিকে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়। এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং আব্দুর রেজাক খান একে একে শুনানি শুরু করেন। যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক রায় ঘোষণার এ তারিখ জানান।

আদালতে ২১ আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। আজ আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পৃথক মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে তিন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল।

এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। এর মধ্যে এখনো ১৮ জন পলাতক। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন আগে থেকেই কারাগারে। আজ আটজনসহ মোট ৩১ জন কারাবন্দি হলেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণেন্দ্রিয় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।