মৃত, প্রবাসী ও হাজতিদের নামেও নাশকতার মামলা!

Looks like you've blocked notifications!
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশের করা নাশকতা মামলার ২ নম্বর আসামি আশুগঞ্জ উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের কাইয়ুম চৌধুরী মারা গেছেন তিন বছর আগে। ছবি : সংগৃহীত

দলীয় কর্মসূচি পালনের সময় নাশকতার অভিযোগ এনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের ৩০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এই মামলার আসামিদের মধ্যে মৃত ও দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। রয়েছেন এমন ব্যক্তিও যিনি আগে থেকেই কারাগারে আছেন।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি কাজে বাধা প্রদান, হত্যা পরিকল্পনা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাটি করেন আশুগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত। আজ বুধবার এসব তথ্য জানা যায়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের স্থানীয় সোনারামপুরের রাস্তা অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে জোটকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।

মামলায় ২ নম্বর আসামি হিসেবে আশুগঞ্জের খড়িয়ালা গ্রামের মৃত মৌলভী হাসান আলীর ছেলে কাইয়ুম চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ কাইয়ুম ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট মারা গেছেন।

কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন, ‘তিন বছর আগে মৃত আমার স্বামীর নাম আসামির তালিকায় দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা মর্মাহত হয়েছি।’

১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে চরলালপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে আলীমকে। আলীম এক বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন বলে জানিয়েছেন মলাই মিয়া।

চরচারতলা গ্রামের মৃত কাদির মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন অন্য একটি মামলায় তিন মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। এই মামলায় ১৫ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছে তাঁর নাম।

মামলার ৪৭ নম্বর আসামি এনামুল হক ঘটনার দিন ও ওই সময়ে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন বলে কোম্পানি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, ঘটনার দিন মামলার ৫৪ নম্বর আসামি উপজেলার লালপুরের হাফিজুর রহমান বাবুলের বাবা মারা যান। ওই সময় বাবার লাশ দাফন করা নিয়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন।

এ ছাড়া এজাহারে নাম না থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার রাতে পুলিশ মাওলানা শফিউল আলম ফরিদ নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায়।

যদিও ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে শফিউল মাদ্রাসায় কর্মরত ছিলেন বলে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তার মাদ্রাসাশিক্ষক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের দাবি।

১৬ সেপ্টেম্বর কোনো কর্মসূচিই ছিল না

এদিকে, মামলার এজাহারে থাকা ১৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির কোনো কর্মসূচিই ছিল না বলে জানিয়েছেন মামলার এক নম্বর আসামি আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ।

চেয়ারম্যান জানান, মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ছিলেন তিনি। এ দিন আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি ছিল না। বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করতে এই ধরনের গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁর অভিযোগ।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু বলেন, ‘মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিন ও সময়ে আশুগঞ্জে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল না। মহাসড়ক অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি থাকলে স্থানীয় ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার  সাংবাদিকরা অবশ্যই জানতেন।’

এমনকি মহাসড়কের পাশের এলাকার বাসিন্দারাও জানান যে ওইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী এসআই সুদীপ্ত রেজা জয়ন্তের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)বদরুল আলম তালুকদার বলেন, ‘কোনো ঘটনা ছাড়া তো আর মামলা হয়নি। আসামিদের নামের ব্যাপারে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’