জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে বক্তারা

খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। ছবি : এনটিভি

খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ ও নিদর্লীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানালেন সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আজ শনিবার বিকেলে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে  যোগ দিয়ে নেতারা এসব দাবি জানান। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তাঁরা। আর এই জাতীয় ঐক্য হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির।

গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার’ সমাবেশে যোগ দেন বিএনপি, বিকল্পধারা, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ, সব ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে। আর জনগণের অধিকার আদায়ে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরলেন ড. কামাল হোসেন।

রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিকল্পধারার সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ছবি : এনটিভি

বিকল্পধারার সভাপতি বি. চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে, চ্যালেঞ্জ করে বলছি, একটা মন্ত্রণালয় দেখান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ওই গদিতে তো প্রধানমন্ত্রী আপনি বসেছেন, একটা মন্ত্রণালয় দেখান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যেখানে ঘুষ ছাড়া চলে। দুর্নীতি ছাড়া চলে।’

‘কেন এই হত্যা, কেন এই গুম, কেন এই সন্ত্রাস। কেন, কেন, কেন? কার বিরুদ্ধে অভিযোগ? এই সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের লুণ্ঠিত জনগণ, অধিকারহারা জনগণ। তাঁরা আজকে রুখে দাঁড়াবে। এই প্রশ্নের উত্তর চাইবে’, যোগ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঐক্য আজকে যে হয়েছে, এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে, দেশে মুক্তির যে শক্তি, আজকে এখানকার উপস্থিতি সেটা প্রমাণ করেছে। দেশের মানুষ জেগেছে। দেশের মানুষের জাগরণের মধ্য দিয়েই সেই শক্তি সৃষ্টি হয়, যেটা দিয়ে দেশকে স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত করে দেশের মানুষের শাসন, জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।’ 

রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আজ শনিবার বিকেলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি     

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য বক্তব্য রাখেন। জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তাঁরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা সব বন্দির মুক্তির দাবি করেন তাঁরা।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই দেশে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে আমাদের জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। এই যে স্বৈরাচার, ভয়াবহ দু:শাসন আমাদের বুকের ওপর পাথর চাপা দিয়ে বসে আছে। এবং দখলদারিত্বের একটি সরকার কায়েম করেছে। তাকে সরাতে হলে জনগণের ঐক্যই হচ্ছে একমাত্র বিকল্প। অন্য কোনো বিকল্প নাই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার বিনা ভোটে, গায়ের জোরে আজকে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচার ব্ভিাগকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব সিনহা সাহেবের বইয়ের লিখনি থেকে আপনারা তার প্রমাণ পেয়েছেন।’

একটি নতুন যাত্রা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, আশা করি, এই ঐক্য প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে আরো সুসংহত হবে। আরো সুসংগঠিত হবে। এবং দেশের সকল মানুষকে, সকল দলের, সকল শ্রেণির মানুষকে সংঘবদ্ধ করবে, ঐক্যবদ্ধ করবে এই স্বৈরাচরী সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবও তাদের বক্তব্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানান।

জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব বলেন, ‘আর রক্ত নয়, আর আগুন জ্বালানো নয়। দলের পরিবর্তে দল নয়, সরকারের পরিবের্ত সরকার নয়। জনগণের সরকার জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একসঙ্গে দুইটা সংসদ চলবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন বানাতে হবে। আমাদের দেশের সামরিক বাহিনী ভোটের আগের একমাস, ভোটের পরের দশ দিন শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। ম্যাজিস্ট্রেসি সম্পন্ন ক্ষমতা তাদেরকে দিয়ে।’

সমাবেশ শেষে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তেল-গ্যাস জাতীয় সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।