২১ দিন পর খুলেছে জব্বার জুট মিল

Looks like you've blocked notifications!
২১ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে আজ শনিবার চালু হয়েছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জব্বার জুট মিলস। ছবি : এনটিভি

দীর্ঘ ২১ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে চালু হয়েছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের জব্বার জুট মিলস। আজ শনিবার সকাল ৬টার শিফট থেকে মিলের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। উৎপাদিত পণ্যের মজুদ বেড়ে যাওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে মিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। এতে করে মিলটির সাত শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়েন।

ঈদের ছুটি শেষে ওইদিন কাজে যোগ দিতে এসে শ্রমিকরা বন্ধের নোটিশে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে অবিলম্বে কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে মিল এলাকায় বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, মিলটিতে সম্পূর্ণ রপ্তানিযোগ্য পাটের ব্যাগ উৎপাদন করা হয়। মিলে সাড়ে তিন হাজার বেল ব্যাগ মজুদ রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও, পাঁচ হাজার ২০৩ বেল ব্যাগ মজুদ আছে। আর এইসব মজুদকৃত ব্যাগ মিলের দুটি গুদামে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কারখানার ফ্লোরে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববাজারে পাটের তৈরি ব্যাগের মন্দার কারণে খুব দ্রুতই যে এইসব ব্যাগ বিক্রি সম্ভব হবে- এমনটি আশা করতে পারছেন না মিল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আবার গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে পাটের বাজার দর মণপ্রতি চার থেকে পাঁচশ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট সংগ্রহও করা যাচ্ছে না। মিল কর্তৃপক্ষের আশংকা, এই বর্ধিত দরে পাট কিনলে প্রতিটি ব্যাগের মূল্য বৃদ্ধি পাবে ১৫ থেকে ১৬ টাকা। যা বিক্রির বেলায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছেন মিলটি সাময়িকভাবে বন্ধ করতে- এমন বক্তব্য তুলে ধরে মিলটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছিলেন, তাদের প্রচেষ্টা থাকবে এইসব বাধা দূর করে যতোটা সম্ভব দ্রুত মিলটি খুলে দেওয়ার।

মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শ্রমিক বিক্ষোভ ও তাদের কর্মহীন হয়ে পড়া নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর এনটিভি অনলাইন এবং ৩ সেপ্টেম্বর এনটিভিতে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। পরে ৬ সেপ্টেম্বর মিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জমা সপ্তাহের বকেয়ার অর্থ পরিশোধ করে দেন এবং খুব শিগরির মিলটি খুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন শ্রমিকদের।

মিল কর্তৃপক্ষ জানান, শুধুমাত্র শ্রমিকদের মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লোকসান সত্বেও এরই মধ্যে দুই কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার মণ পাট কেনা হয়েছে। পাট কেনা চলমান আছে জানিয়ে তাঁরা জানান, এইভাবে লোকসান দিয়ে মিলটি চালু রাখা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য।

দেশের বেসরকারি পাটকলগুলির অবস্থা প্রায় একই রকম জানিয়ে তাঁরা বলেন, এই সংকট কাটাতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পাটশিল্পে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে, বিশ্বব্যাপী পাটের তৈরি ব্যাগের বাজার তৈরি করতে হবে, দেশে পাটের মোড়কের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

এদিকে মিলটি খুলে দেওয়ার পর আজ সকালে কথা হয় মিলের শ্রমিক নোয়াজ মিয়া (৬০), মো. শাহজাহান (৫৫), হিরা মিয়া (৫৫), রেনু বেগম (৪০), নাজমা বেগম (৪৫)সহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, মিলটি চালু হওয়ায় তাঁরা খুবই খুশি হয়েছেন। এজন্য তাঁরা মালিকসহ সব কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। ধন্যবাদ জানান এলাকার সাংবাদিকদের। পাশাপাশি সরকারের প্রতি দাবি জানান, মিলটি চালু রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।